ট্রাম্পের ১০০ দিনে: প্রতিজ্ঞা কতটুকু রক্ষা, কতটা অসম্পূর্ণ?
ওয়াশিংটন, ডিসি – ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর কেটে গেছে ১০০ দিন। এই সময়ের মধ্যে তিনি তার নির্বাচনী প্রচারণার সময় দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো কতটা বাস্তবায়িত করেছেন, তা নিয়ে চলছে আলোচনা। অনেক ক্ষেত্রেই তার নেওয়া পদক্ষেপগুলোর সুদূরপ্রসারী প্রভাব এখনো স্পষ্ট নয়।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফিরে আসার পর ট্রাম্পের প্রধান লক্ষ্য ছিল, বিভিন্ন নীতি পরিবর্তন করে ফেডারেল সরকারের কার্যকারিতা বাড়ানো এবং পররাষ্ট্র নীতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করা। তবে, তার কিছু সিদ্ধান্ত বিতর্ক সৃষ্টি করেছে এবং অনেক ক্ষেত্রে আইনি জটিলতাও তৈরি হয়েছে। এখন পর্যন্ত তার নেওয়া পদক্ষেপগুলোর দিকে যদি তাকানো যায়, তবে দেখা যায় প্রতিশ্রুতি রক্ষার ক্ষেত্রে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে, ট্রাম্পের অন্যতম প্রতিশ্রুতি ছিল জীবনযাত্রার ব্যয় কমানো। যদিও ২০২২ সালের ৯.১ শতাংশের উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমে বর্তমানে কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে, তবে ফেডারেল রিজার্ভ সতর্ক করেছে যে ট্রাম্পের শুল্ক নীতি সম্ভবত জিনিসপত্রের দাম আরও বাড়িয়ে দেবে। এছাড়া, দেশের ঋণ পরিশোধের প্রতিশ্রুতিও পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা কম, কারণ কর হ্রাসের পরিকল্পনা রাজস্ব কমিয়ে দিতে পারে।
অবৈধ অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে ট্রাম্প উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছেন। মেক্সিকো থেকে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। তবে, অভিবাসন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) কর্তৃক ব্যাপক ধরপাকড় চলছে, যেখানে অনেক নিরীহ মানুষকে কোনো বিচার ছাড়াই তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।
নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্প জ্বালানি বিল অর্ধেক বা তার বেশি কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে, এই বিষয়ে এখনো দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, যার ফলস্বরূপ ভোক্তাদের সরাসরি কোনো সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনা এখনো পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ক্ষেত্রে ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত বেশ উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। চীন, কানাডা এবং মেক্সিকোর পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানো হয়েছে, যা বাজারের অস্থিরতা তৈরি করেছে। এই ধরনের নীতি দেশের অর্থনীতিতে কতটা সুফল আনবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধ বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। বরং, যুদ্ধ এখনো চলছে এবং এর সমাধানে ট্রাম্পের কোনো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
কর হ্রাস এবং শিক্ষাখাতে পরিবর্তন আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প। তবে, কংগ্রেসের সমর্থন পাওয়া কঠিন হওয়ায় এই ক্ষেত্রে তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জটিলতা দেখা দিতে পারে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করা হলেও, তারা এখনো নতি স্বীকার করেনি।
ট্রান্সজেন্ডার অধিকারের বিষয়েও ট্রাম্প তার অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি ক্রীড়া ক্ষেত্রে ট্রান্সজেন্ডার অ্যাথলেটদের অংশগ্রহণের বিরোধিতা করেছেন এবং এই সংক্রান্ত নীতি পরিবর্তনের জন্য পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এছাড়াও, সরকারি দপ্তরগুলোতে কর্মীর সংখ্যা কমানো এবং প্রশাসনের দক্ষতা বাড়ানোর পরিকল্পনা এখনো সম্পূর্ণতা পায়নি।
সবশেষে, ৬ জানুয়ারীর ক্যাপিটল হিলের ঘটনায় জড়িতদের ক্ষমা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ট্রাম্প। তার এই পদক্ষেপ অনেক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
পরিবেশ সুরক্ষার ক্ষেত্রেও ট্রাম্প বেশ কিছু নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন। যদিও তিনি পরিবেশ সুরক্ষার অনেক দিক পরিবর্তনের চেষ্টা করছেন, তবে এর বাস্তব প্রভাব এখনো দেখা যায়নি।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এপি’র প্রতিবেদন অবলম্বনে।