কিংবদন্তী বক্সার জর্জ ফোরম্যান ৭৬ বছর বয়সে প্রয়াত: ক্রীড়া জগতে শোকের ছায়া
বিশ্বখ্যাত হেভিওয়েট বক্সিং চ্যাম্পিয়ন জর্জ ফোরম্যান, যিনি শুধু খেলার জগতে নয়, বরং একজন সফল ব্যবসায়ী, ধর্মপ্রচারক এবং অনুপ্রেরণাদায়ী ব্যক্তি হিসেবেও পরিচিত ছিলেন, ৭৬ বছর বয়সে মারা গিয়েছেন।
শুক্রবার তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে এই দুঃসংবাদ জানানো হয়। তাঁর প্রয়াণে বিশ্বজুড়ে ক্রীড়া এবং বিনোদন জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা শোক প্রকাশ করেছেন।
ফোরম্যানের পরিবার তাঁদের শোকবার্তায় জানায়, “জর্জ ফোরম্যান ছিলেন একজন মানবিক, অলিম্পিয়ান এবং দু’বারের বিশ্ব হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন। তিনি ছিলেন গভীর শ্রদ্ধার পাত্র, ন্যায়বিচারের প্রতীক, শৃঙ্খলা ও দৃঢ়তার মানুষ এবং নিজের সম্মান রক্ষার জন্য অবিরাম লড়ে গেছেন।”
ফোরম্যানের প্রয়াণে শোক প্রকাশ করে কিংবদন্তী বক্সার মাইক টাইসন বলেন, “জর্জ ফোরম্যানের পরিবারের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা। বক্সিং এবং এর বাইরেও তাঁর অবদান চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
১৯৭৩ সালে ফোরম্যান এক অসাধারণ লড়াইয়ে তৎকালীন চ্যাম্পিয়ন জো ফ্রেজিয়ারকে দুই রাউন্ডে ছয়বার মাটিতে ফেলে দিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ জেতেন।
তাঁর এই জয় বক্সিং ইতিহাসে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করে।
বর্তমান বিশ্ব বক্সিং কাউন্সিলের (World Boxing Council) প্রেসিডেন্ট মাউরিসিও সুলাইমান ফোরম্যানকে বর্ণনা করেছেন, “একজন কিংবদন্তী বক্সিং চ্যাম্পিয়ন, জীবন পরিবর্তনকারী ধর্মপ্রচারক, স্বামী, পিতা, পিতামহ এবং শ্রেষ্ঠ বন্ধু।”
তিনি আরও যোগ করেন, “তাঁর স্মৃতি অমর হয়ে থাকবে, শান্তিতে বিশ্রাম নিন, বিগ জর্জ।
বক্সিং প্রোমোটার বব আরুম বলেন, “জর্জ শুধু আমার নয়, আমার পুরো পরিবারের একজন ভালো বন্ধু ছিলেন।
আমরা আমাদের পরিবারের একজন সদস্যকে হারালাম, যা আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক।
১৯৭৪ সালে জায়ারে (বর্তমান ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো) অনুষ্ঠিত ‘রাম্বল ইন দ্য জাঙ্গল’ খ্যাত ম্যাচে ফোরম্যান, মোহাম্মদ আলীর কাছে পরাজিত হন।
সৌদি আরবে বক্সিংয়ের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী, কিংডমের জেনারেল এন্টারটেইনমেন্ট অথরিটির চেয়ারম্যান তুর্কি আল-শেখ, ফোরম্যান, আলী এবং ফ্রেজিয়ারের একটি ছবি পোস্ট করে শোক প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, “আমার এবং বক্সিং বিশ্বের জন্য দুঃখের খবর… একটি অবিস্মরণীয় যুগের শেষ স্তম্ভটি আজ চলে গেল… তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি, বিগ জর্জ ফোরম্যান!”
খেলা ছাড়ার পর ফোরম্যান একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ‘জর্জ ফোরম্যান গ্রিল’-এর মাধ্যমে তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেন।
১৯৯৪ সালে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্ব হেভিওয়েট খেতাব জেতার বছরই তিনি এই ব্যবসার সূচনা করেন এবং এই গ্রিল বিক্রি করে তিনি বক্সিংয়ের তিন দশক থেকে যা আয় করেছিলেন, তার চেয়ে বেশি অর্থ উপার্জন করেন।
বাস্কেটবল তারকা চার্লস বার্কলে তাঁর শোকবার্তায় জানান, “আমি মি. ফোরম্যানকে বেশ ভালোভাবে চিনতাম।
তাঁর সঙ্গে বক্সিং ম্যাচগুলোতে দেখা হতো এবং আমি প্রায়ই তাঁর কাছে জানতে চাইতাম, কীভাবে খেলোয়াড়ি জীবন শেষে একজন সফল ব্যবসায়ী হওয়া যায়।
তিনি অবশ্যই সর্বকালের সেরা বক্সারদের একজন ছিলেন, কিন্তু একইসঙ্গে ছিলেন একজন ভদ্রলোক এবং ধর্মযাজক।
এটা খুবই কষ্টের, বলার মতো আর কোনও শব্দ নেই। তাঁর পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা। আমি খুবই মর্মাহত হয়েছি।
বাস্কেটবল খেলোয়াড় ম্যাজিক জনসনও শোক প্রকাশ করে বলেন, “আমি জর্জের চ্যাম্পিয়নশিপের অনেক লড়াই দেখেছি।
তিনি ছিলেন একজন অসাধারণ নॉकআউট শিল্পী এবং তাঁর সঙ্গে শুধু একজন বক্সার হিসেবে নয়, একজন মানুষ হিসেবে পরিচিত হতে পেরে আমি আনন্দিত হয়েছি।
খেলা ছাড়ার পর তিনি একজন অসাধারণ ব্যবসায়ী হয়ে উঠেছিলেন।
তথ্য সূত্র: The Guardian