মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি পশু আশ্রয়কেন্দ্রে কুকুরদের দত্তক নেওয়ার সংখ্যা বাড়াতে অভিনব এক কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। সেখানকার কর্মীরা মজার ভিডিও তৈরি করে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করেন, যার ফলস্বরূপ বেড়েছে কুকুরদের নতুন পরিবারে যাওয়ার সম্ভাবনা।
ঘটনাটি ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসির ন্যাশভিলে শহরে।
ন্যাশভিলের মেট্রো অ্যানিম্যাল কেয়ার অ্যান্ড কন্ট্রোল-এর কর্মী অ্যাড্রিয়ান বুডনিক গত এক দশকের বেশি সময় ধরে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা কুকুরদের ছবি তুলতেন। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারীর সময় তিনি এক নতুন আইডিয়া নিয়ে আসেন।
যেহেতু সেই সময় খুব কম সংখ্যক মানুষের আশ্রয়ে যাওয়ার অনুমতি ছিল, তাই তিনি কুকুরদের ভিডিও তৈরি করতে শুরু করেন।
ভিডিওগুলোতে তিনি কুকুরদের মজার সব নাম দেন এবং তাদের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তোলেন। প্রথমে তিনি “আনিটা ওয়াকার” নামে একটি চরিত্রে অভিনয় করেন, যিনি দ্রুত কথা বলেন এবং গরুর চামড়ার বুট পরে থাকেন।
এরপর তিনি “হোয়াটস দিস দেন?” (“এটা কী?”) শিরোনামে একটি সিরিজ শুরু করেন, যেখানে অদ্ভুত নামের কুকুরদের নিয়ে ছোট ভিডিও তৈরি করা হয়। এই ভিডিওগুলো দ্রুত দর্শকদের মধ্যে সাড়া ফেলে এবং এর মাধ্যমেই বাড়ে কুকুর দত্তক নেওয়ার আগ্রহ।
বুডনিক জানান, “বিষয়টি অনেকটা অপ্রত্যাশিত ছিল। আমাদের কাছে বিশাল ও লম্বা একটা কুকুর ছিল, সম্ভবত পুডল-ডুডলের মতো দেখতে।
অনেকের ধারণা ছিল, আশ্রয়কেন্দ্রে হয়তো লোমশ কুকুর পাওয়া যায় না। তাই বুডনিক “ক্যারেন” নামের একটি চরিত্রে অভিনয় করে ক্যামেরার সামনে এসে বলেন, “আশ্রয়কেন্দ্রে শুধু পিট বুল (এক ধরনের কুকুর) আছে।”
এরপর তিনি বিশাল, কোঁকড়ানো লোমওয়ালা একটি কুকুরকে তুলে ধরেন, যার জিভ বেরিয়ে ছিল। তিনি মজা করে সেটির নাম দেন “হিমালয়ান ফার গবলিন”।
ভিডিওটি দ্রুত ভাইরাল হয়। এরপর তিনি “টিকাপ ওয়্যারউলফ” (ছোট আকারের নেকড়ে) এবং “স্পেকলড ফ্রেকলড কাডল ক্যাফ” (ছোপ ছোপ দাগওয়ালা আদরপ্রিয় বাছুর)-এর মতো আরও অনেক কল্পনামূলক নামের কুকুরদের নিয়ে ভিডিও তৈরি করেন।
এছাড়াও ছিল “ফ্রেঞ্চ ব্যাগুয়েট লং লেডি” ও “ক্রিমসিকল পুশ-আপ পাপ”-এর মতো আকর্ষণীয় নাম।
আশ্রয়কেন্দ্রে মাঝে মাঝে পিট বুল-এর মিশ্রণও আসে। ডিসেম্বর মাসের একটি ভিডিওতে বুডনিক বেশ কয়েকজন পিট বুল-কে উৎসবের পোশাকে সাজিয়ে “আই ওয়ান্ট আ পিট-ও-পোটোমাস ফর ক্রিসমাস” গানটি গেয়েছিলেন, যা ৫০ লক্ষেরও বেশি বার দেখা হয়েছে।
বুডনিক বলেন, “ভিডিওগুলোর মাধ্যমে পরিচিতি পাওয়াটা আনন্দের, তবে আসল সফলতা আসে যখন কুকুরদের দত্তক নেওয়া হয়।” আশ্রয়কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে কুকুর দত্তক নেওয়ার সংখ্যা ২৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে।
মেট্রো অ্যানিম্যাল কেয়ার অ্যান্ড কন্ট্রোল-এর পরিচালক অ্যাশলে হ্যারিংটন জানান, “আমরা সারা বিশ্ব থেকে ফোন পাই। এমনকি কানাডা থেকেও আমাদের কাছে ফোন এসেছে। সবাই জানতে চায়, ভিডিওতে দেখানো নির্দিষ্ট কুকুরটিকে দত্তক নেওয়া যাবে কিনা।”
ভিডিওগুলোর জনপ্রিয়তা শুধু দত্তক নেওয়ার সংখ্যাই বাড়ায়নি, সেই সাথে বেড়েছে অর্থ ও বিভিন্ন সামগ্রীর দানও। স্বেচ্ছাসেবকদের কক্ষে বুডনিকের ভিডিওর কথা উল্লেখ করে আসা চিঠিগুলো টাঙানো রয়েছে।
তবে অন্যান্য অনেক আশ্রয়কেন্দ্রের মতোই, এখানেও জায়গা সংকট রয়েছে। বুডনিক এই বিষয়ে একটি কথাই বলেন, “কুকুরদের জন্মনিয়ন্ত্রণ করুন।”
ছোটবেলায় ছবি তোলা শুরু করা বুডনিক পরবর্তীতে একটি কুকুর দত্তক নেওয়ার পরেই আবার ছবি তোলার প্রতি আকৃষ্ট হন। বর্তমানে তিনি সপ্তাহে ৭-১০ ঘণ্টা আশ্রয়কেন্দ্রে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন।
বুডনিক তাঁর ছবি ও ভিডিওর মাধ্যমে আশ্রয়কেন্দ্র সম্পর্কে প্রচলিত ভুল ধারণা ভাঙতে চান। তিনি চান, মানুষ বুঝুক আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা কুকুরগুলোও ভালোবাসার যোগ্য।
তিনি বলেন, “ভিডিওতে যখন তাদের খেলাধুলা করতে দেখি, যখন তারা আদর করে, তাদের মজার হাসি দেখি, তখন তাদের আসল রূপটা ফুটে ওঠে।”
বুডনিকের এই সাফল্যের কারণে অন্যান্য আশ্রয়কেন্দ্রগুলোও তাঁর আইডিয়া অনুসরণ করতে শুরু করেছে। তিনি এতে আনন্দিত হন, তবে অতিরিক্ত কাজের চাপ নিতে রাজি নন।
তাঁর মতে, “আমি শুধু মজা করি। আমি কুকুরকে ভালোবাসি। আমার মনে হয়, তারা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রাণী।”
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস