পোপ ফ্রান্সিস হাসপাতাল থেকে ফিরছেন, স্বস্তি ক্যাথলিক বিশ্বে।
রোম, [তারিখ উল্লেখ করা হয়নি] – গুরুতর নিউমোনিয়ার সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে হাসপাতাল থেকে মুক্তি পাচ্ছেন পোপ ফ্রান্সিস। পাঁচ সপ্তাহ ধরে তিনি ইতালির জেমেলি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
এই দীর্ঘ সময় তার জীবন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল, এমনটাই জানা গেছে। ৮৮ বছর বয়সী পোপের সুস্থ হয়ে ওঠা ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের জন্য এক বিশাল স্বস্তির খবর।
হাসপাতাল থেকে ফেরার আগে তিনি জনসাধারণের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন। এরপর তিনি ভ্যাটিকানের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন, যেখানে তিনি অন্তত দুই মাস বিশ্রাম ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মধ্যে কাটাবেন।
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, আপাতত তাকে বেশি মানুষের সঙ্গে মিশতে বা অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে ধীরে ধীরে তিনি তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরতে পারবেন।
পোপের ১২ বছরের শাসনামলে এটি ছিল সবচেয়ে দীর্ঘ সময় হাসপাতালে কাটানো। শুধু তাই নয়, সাম্প্রতিক ইতিহাসে কোনো পোপ এত বেশি দিন হাসপাতালে ছিলেন না।
খবরটি ছড়িয়ে পড়ার পর ভ্যাটিকান এবং সারা বিশ্বের ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের মধ্যে আনন্দের ঢেউ লেগেছে।
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ফুসফুসের সংক্রমণ কমাতে পোপকে এখনো কিছু ওষুধ খেতে হবে। একইসঙ্গে নিয়মিত ফিজিওথেরাপি চালিয়ে যেতে হবে।
তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ড. লুইগি কার্বোনে জানিয়েছেন, “পোপ খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছেন। তিনি কয়েক দিন ধরেই জানতে চাচ্ছিলেন, কবে বাড়ি ফিরতে পারবেন।”
পোপ ফ্রান্সিসের শরীরে আগে থেকেই ফুসফুসের সমস্যা ছিল। অল্প বয়সে তাঁর ফুসফুসের একটি অংশও অস্ত্রোপচার করে বাদ দিতে হয়েছিল।
গত ১৪ই ফেব্রুয়ারি ব্রঙ্কাইটিস বেড়ে যাওয়ায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রথমে তাঁর শ্বাসযন্ত্রে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ছত্রাকের সংক্রমণ ধরা পরে। পরে উভয় ফুসফুসে নিউমোনিয়া ধরা পরে।
রক্ত পরীক্ষার পর তাঁর রক্তাল্পতা, প্লেটলেট কমে যাওয়া এবং কিডনি দুর্বল হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। যদিও পরে দুটি রক্ত দেওয়ার পর অবস্থার উন্নতি হয়।
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ২৮শে ফেব্রুয়ারি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন পোপ। তাঁর কাশি উঠলে তিনি মুখ থেকে তরল বের হওয়ার কারণে শ্বাসকষ্ট হতে শুরু করে। এরপর শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে তাঁকে একটি বিশেষ মাস্ক পরানো হয়।
কয়েকদিন পর তাঁর শ্বাসকষ্ট আরও বেড়ে যায়। ফুসফুসে জমে থাকা তরল বের করার জন্য চিকিৎসকদের ম্যানুয়ালি কাজ করতে হয়েছে। তখন থেকে রাতে তিনি শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখার জন্য মাস্ক ব্যবহার করতেন।
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, পোপের অবস্থা এতটাই গুরুতর ছিল যে, তিনি হয়তো সেরে উঠবেন না এমন একটা ধারণা তৈরি হয়েছিল। তবে, তিনি সবসময় সজাগ ছিলেন এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে সহযোগিতা করেছেন।
জেমেলি হাসপাতালের প্রধান চিকিৎসক ড. সার্জিও আলফিয়েরি জানিয়েছেন, “পোপের জীবন দুবার ঝুঁকির মধ্যে ছিল।” তিনি আরও জানান, নিউমোনিয়ার মতো গুরুতর পরিস্থিতি থেকে সবাই যে সুস্থ হয়ে ওঠেন, তা নয়।
ভ্যাটিকান সূত্রে খবর, এপ্রিল মাসের ৮ তারিখে তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে পোপের সাক্ষাতের কথা রয়েছে। এছাড়া, এপ্রিল মাসের শেষের দিকে ইস্টার সানডে-র অনুষ্ঠানেও তাঁর যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মে মাসের শেষে তুরস্ক সফরে যাওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।
বর্তমানে, ভ্যাটিকানে ২৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া পবিত্র বর্ষ উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই সময়ে প্রায় ৩ কোটির বেশি তীর্থযাত্রীর সমাগম হবে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস