তুরস্কে রাষ্ট্রপতি এরদোয়ানের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী, ইস্তাম্বুলের মেয়র একরাম ইমামোগলুকে দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশটিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে, যা গণতন্ত্র এবং আইনের শাসনের প্রতি গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
রবিবার এই রায় ঘোষণার পর, তুরস্কের বৃহত্তম শহর ইস্তাম্বুলে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা ইমামোগলুর মুক্তির দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে। তাদের সমর্থনে দেশটির বিভিন্ন শহরেও প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে।
পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে জল কামান, টিয়ার গ্যাস এবং রাবার বুলেট ব্যবহার করেছে।
ইমামোগলুর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে যে তিনি একটি অপরাধ চক্র পরিচালনা করেছেন, ঘুষ গ্রহণ করেছেন, চাঁদাবাজি করেছেন, ব্যক্তিগত তথ্য অবৈধভাবে সংগ্রহ করেছেন এবং দরপত্র প্রক্রিয়াকরণে কারচুপি করেছেন। তবে তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ আনা হয়নি।
এই গ্রেপ্তারের ফলে তুরস্কের আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের (২০২৮) রাজনৈতিক সমীকরণ নতুন মোড় নিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে এরদোয়ান তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীকে নির্বাচনের দৌড় থেকে দূরে রাখতে চাইছেন।
যদিও সরকার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আদালতের এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণভাবে স্বাধীন এবং এর সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই।
ইমামোগলুর দল, রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি), এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা একে গণতন্ত্রের উপর আঘাত হিসেবে দেখছে।
দলের পক্ষ থেকে ইমামোগলুর প্রতি সমর্থন জানাতে দেশজুড়ে প্রতীকী ভোটগ্রহণের আয়োজন করা হয়েছে।
বিরোধী দল এবং আন্তর্জাতিক মহল এই গ্রেফতারের তীব্র সমালোচনা করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকার সংস্থা, কাউন্সিল অব ইউরোপ এই সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে ইমামোগলুকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইমামোগলুকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে এরদোয়ান তার ক্ষমতা আরও সুসংহত করতে চাইছেন। কারণ, বিভিন্ন জনমত জরিপে দেখা গেছে, ইমামোগলু নির্বাচনে এরদোয়ানের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন।
ইতিমধ্যে, ইমামোগলুর বিরুদ্ধে আরও কিছু মামলার কার্যক্রম চলছে। এর আগে, তিনি তুরস্কের সুপ্রিম ইলেকটোরাল কাউন্সিলের সদস্যদের অপমান করার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন।
এছাড়াও, তার বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নিয়েও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস