যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান এবং এর ফলস্বরূপ অঞ্চল দখলের ক্ষেত্রে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মূল লক্ষ্য হলো—যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি আদায় করা। সম্প্রতি এমনটাই মন্তব্য করেছেন রুশ বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ সার্গেই রাদচেনকো।
তার মতে, ক্ষমতা প্রদর্শনের মাধ্যমে পরাশক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে পারাটাই পুতিনের প্রধান আকাঙ্ক্ষা।
রাদচেনকো’র ভাষ্যমতে, সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে শুরু করে বর্তমান রাশিয়া—ক্রেমলিনের শাসকদের ‘মহান শক্তি’ হিসেবে বিশ্ব দরবারে নিজেদের পরিচিত করার এক অদম্য আগ্রহ বরাবরই ছিল। তিনি মনে করেন, ইউক্রেন যুদ্ধও সেই ধারাবাহিকতারই অংশ।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে রাদচেনকো বলেন, “পুতিনের মূল চাওয়া হলো, ইউক্রেনে রাশিয়ার অর্জিত ভূমিকে বৈধতা দিক যুক্তরাষ্ট্র। তিনি এই ধারণার প্রতি আচ্ছন্ন।”
ইতিহাসবিদ রাদচেনকো’র মতে, পুতিনের এই ‘মহান শক্তি’র ধারণা মূলত উনিশ শতকের সাম্রাজ্যবাদী চিন্তাভাবনার প্রতিচ্ছবি। যেখানে রাশিয়া তার প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর প্রভাব বিস্তার করতে চায়।
তিনি বলেন, “সোভিয়েত নেতারাও তাদের আশেপাশের দেশগুলোকে নিজেদের প্রভাব বলয়ের অংশ হিসেবে বিবেচনা করতেন।”
সোভিয়েত আমলে, এমনকি জোসেফ স্তালিনের মতো কঠোর শাসকেরও লক্ষ্য ছিল—মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি আদায় করা। রাদচেনকোর মতে, “ছোটখাটো সুবিধা পেলেও, যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি ছিল তার কাছে অনেক বড় কিছু।”
রাদচেনকোর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র অনেক ক্ষেত্রে ইউরোপকে দুর্বল মনে করতে শুরু করে। তবে তারা চীনকে একটি ‘মহান শক্তি’ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়েছে।
পুতিনের এই ‘ক্ষমতা প্রদর্শনের’ মানসিকতাকে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে: “যারা নিজেদের এই শ্রেষ্ঠত্বকে অস্বীকার করে, তাদের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ করাই যেন তাদের (রাশিয়ার) দায়িত্ব।”
আর সেকারণেই ইউক্রেনকে শাস্তি দিতে চায় রাশিয়া।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়ার এই আগ্রাসী মনোভাবের কারণে বিশ্বে নতুন করে ঠান্ডা যুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যেকার প্রতিদ্বন্দ্বিতাই মুখ্য, যেখানে রাশিয়া অনেকটা পিছিয়ে আছে।
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা