পাবলো পিকাসো—বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রভাবশালী শিল্পী, যিনি তাঁর উদ্ভাবনী শিল্পকর্মের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে পরিচিত। তাঁর শিল্পকলার মতোই, তাঁর ব্যক্তিগত জীবনও ছিল বহু চর্চিত।
সম্প্রতি, সু রো-এর লেখা ‘হিডেন পোর্ট্রেইটস: দ্য আনটোল্ড স্টোরিজ অফ সিক্স উইমেন হু লাভড পিকাসো’ শীর্ষক একটি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে পিকাসোর সঙ্গে জড়িত ছয় নারীর অজানা গল্প তুলে ধরা হয়েছে। বইটিতে শুধু শিল্পী হিসেবে নয়, বরং মানুষ হিসেবেও পিকাসোর জীবনের বিভিন্ন দিক উন্মোচন করা হয়েছে।
বইটিতে যে ছয়জন নারীর কথা বলা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন ফ্রাঁসোয়াজ জিলট, যিনি ছিলেন পিকাসোর দীর্ঘদিনের সঙ্গী এবং তাঁর দুটি সন্তানের মা। জিলট নিজেও একজন শিল্পী ছিলেন এবং তাঁর কাজ আধুনিক শিল্পকলার জগতে গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে।
এছাড়াও, রয়েছেন ফার্নান্দা অলিভিয়ে, যিনি ১৯০৫ থেকে ১৯১২ সাল পর্যন্ত পিকাসোর সঙ্গে মঁমার্ত্রে বসবাস করতেন। রুশ ব্যালে নর্তকী ওলগা খোকলোভা, মডেল মারি-তেরেজ ওয়াল্টার, চিত্রশিল্পী ও আলোকচিত্রী ডোরা মার এবং একসময় একটি মৃৎশিল্পের দোকানে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করা জ্যাকুলিন রোক—এই নারীদের প্রত্যেকের সঙ্গেই পিকাসোর গভীর সম্পর্ক ছিল।
বইটি পাঠকদের শিল্পী পিকাসোর জীবন এবং তাঁর শিল্পকর্মের পেছনের গল্পগুলো জানতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, ডোরা মারের কথা বলা যায়, যিনি পিকাসোর ‘গার্নিকা’ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।
মারের সৃজনশীলতা এবং তাঁর নিজস্ব শিল্পকর্ম, উভয়ই পিকাসোর জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। বইটিতে এই নারীদের শিল্পী হিসেবে, তাঁদের নিজস্ব সৃষ্টিশীলতা এবং তাঁদের জীবনের সংগ্রামের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
তবে, বইটির একটি সমালোচনামূলক দিকও রয়েছে। সমালোচকরা বলছেন, লেখিকা সম্ভবত নারীদের শুধুমাত্র পিকাসোর সঙ্গে তাঁদের সম্পর্কের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করেছেন।
এর ফলে, তাঁদের নিজস্ব পরিচয় এবং শিল্পচর্চার প্রতিচ্ছবি কিছুটা হলেও ম্লান হয়ে গেছে। ফ্রাঁসোয়াজ জিলট তাঁর স্মৃতিচারণে পিকাসোর সঙ্গে কাটানো সময়ের কথা উল্লেখ করেছেন, যা সেই সময়ের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট বুঝতে সাহায্য করে।
পিকাসোর জীবন ছিল শিল্প, প্রেম এবং সম্পর্কের এক জটিল মিশ্রণ। সু রো-এর এই বইটি সেই বহুমাত্রিক জীবনের গভীরে প্রবেশ করে, যা শিল্পবোদ্ধা থেকে শুরু করে সাধারণ পাঠক—সবার জন্যই আগ্রহের বিষয় হতে পারে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান