মহিলাদের জন্য নতুন এক ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির উদ্ভাবন করেছেন বিজ্ঞানীরা। এটি ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করানো হবে, যা দীর্ঘ সময় ধরে কার্যকর থাকবে।
বর্তমানে প্রচলিত জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিগুলোর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, যেমন – কিছু পদ্ধতি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শরীরে স্থাপন করতে হয়, আবার কিছু ইনজেকশন তিন মাস পরপর নিতে হয়। নতুন এই পদ্ধতিটি নারীদের জন্য আরও সহজ ও কার্যকর হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, এই ইনজেকশন শরীরে প্রবেশ করার পর নিজস্ব ক্ষমতাবলে জমাট বেঁধে একটি শক্ত ইমপ্ল্যান্ট তৈরি করবে। এই ইমপ্ল্যান্ট ধীরে ধীরে ওষুধ সরবরাহ করবে, যা দীর্ঘ সময় ধরে গর্ভধারণ প্রতিরোধে সহায়তা করবে।
বিজ্ঞানীরা এরই মধ্যে পরীক্ষা করে দেখেছেন যে, ইঁদুরের শরীরে এই ইনজেকশন প্রয়োগের ফলে প্রায় ৯৭ দিনের বেশি সময় ধরে ওষুধ সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি) এবং ব্রিগহাম অ্যান্ড উইমেন’স হাসপাতালের গবেষক ড. জিওভানি ট্রাভার্সো এই গবেষণা দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি জানান, এই পদ্ধতির মাধ্যমে কেবল জন্মনিয়ন্ত্রণই নয়, এইচআইভি, যক্ষ্মা, সিজোফ্রেনিয়া, দীর্ঘমেয়াদী ব্যথা এবং মেটাবলিক রোগের চিকিৎসাও সহজ করা যেতে পারে।
কারণ এই ইনজেকশন দেওয়ার পদ্ধতিটি শরীরের ভেতরে ধীরে ধীরে ওষুধ সরবরাহ করার একটি নতুন উপায়।
নতুন এই পদ্ধতিতে প্রোজেস্টেরন হরমোনের একটি কৃত্রিম সংস্করণ ব্যবহার করা হয়েছে। এই হরমোনের অতি ক্ষুদ্র কণাগুলো এমন একটি দ্রবণে মেশানো হয় যা শরীরের ভেতরের তরলের সঙ্গে মিশে যেতে চায় না।
ফলে কণাগুলো একত্রিত হয়ে জমাট বাঁধে এবং ধীরে ধীরে শক্ত একটি ইমপ্ল্যান্ট তৈরি করে। এটি খুব সহজেই ছোট একটি সূঁচের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করানো সম্ভব।
গবেষকরা জানিয়েছেন, এই পদ্ধতির মাধ্যমে কয়েক বছর পর্যন্ত শরীরে ওষুধ সরবরাহ করা যেতে পারে। যদি কোনো কারণে এটি অপসারণ করার প্রয়োজন হয়, তবে সেটিও সম্ভব।
বর্তমানে এই গবেষণা প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে মানুষের ওপর এর পরীক্ষা শুরু করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই বিষয়ে মতামত দিতে গিয়ে ‘ফ্যাকাল্টি অফ সেক্সুয়াল অ্যান্ড রিপ্রোডাক্টিভ হেলথকেয়ার’-এর প্রেসিডেন্ট ড. জ্যানেট বার্টার বলেছেন, এই উদ্ভাবন স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা কম রয়েছে এমন দেশগুলোতে বসবাসকারী নারীদের জন্য একটি সুবিধাজনক বিকল্প হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, এই প্রযুক্তির নিরাপত্তা, কার্যকারিতা এবং সহজলভ্যতা সম্পর্কে আরও গবেষণা প্রয়োজন। সেইসঙ্গে ভবিষ্যতে এর ব্যবহারকারীদের চাহিদা ও পছন্দকে গুরুত্ব দিতে হবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান