ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রভাব বিস্তারের একটি নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সাবেক এই প্রেসিডেন্টের সাম্প্রতিক নির্বাহী আদেশে স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশনের (Smithsonian Institution) কার্যক্রমকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই ইনস্টিটিউশনটি, যা ন্যাশনাল চিড়িয়াখানা (National Zoo) এবং একাধিক জাদুঘরের সমন্বয়ে গঠিত, দেশটির রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বৃহস্পতিবার স্বাক্ষরিত এক নির্বাহী আদেশে ট্রাম্প, ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্সকে (JD Vance) সরকারি অর্থ ব্যয়ে বাধা দেয়ার দায়িত্ব দিয়েছেন। এই অর্থ ব্যবহার করা হতো এমন প্রদর্শনী বা প্রকল্পের জন্য, যা “মার্কিন মূল্যবোধকে ক্ষুণ্ণ করে, জাতিগত বিভাজন সৃষ্টি করে, অথবা ফেডারেল আইন ও নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।” উল্লেখযোগ্যভাবে, ভ্যান্স বর্তমানে স্মিথসোনিয়ানের বোর্ড অফ রিজেন্টসের (Board of Regents) সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আদেশে বলা হয়েছে, “একসময় আমেরিকান শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক এবং সাংস্কৃতিক অর্জনের বিশ্বব্যাপী দৃষ্টান্ত হিসেবে সম্মানিত স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশন, সম্প্রতি একটি বিভেদ সৃষ্টিকারী, জাতি-কেন্দ্রিক আদর্শের প্রভাবে এসেছে।” এই পরিবর্তনের ফলে, আমেরিকান এবং পশ্চিমা মূল্যবোধকে “অন্তর্নিহিতভাবে ক্ষতিকর এবং নিপীড়নমূলক” হিসেবে চিত্রিত করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশন বিশ্বের বৃহত্তম জাদুঘর কমপ্লেক্স, যেখানে ২১টি জাদুঘর এবং ন্যাশনাল চিড়িয়াখানা অন্তর্ভুক্ত। গত বছর প্রায় ১ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষ স্মিথসোনিয়ানের বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেছেন। এখানকার প্রায় সব জাদুঘরে প্রবেশ বিনামূল্যে।
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে জাতিগত বৈষম্য এবং তার প্রভাব নিয়ে আলোচনাকে সীমিত করার ইঙ্গিত দেয়। এর আগে তিনি আইন সংস্থা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপরও একই ধরনের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছিলেন।
আদেশটিতে বিশেষভাবে ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ আফ্রিকান আমেরিকান হিস্টরি অ্যান্ড কালচার (National Museum of African American History and Culture) এবং স্মিথসোনিয়ান আমেরিকান আর্ট মিউজিয়ামকে (Smithsonian American Art Museum) চিহ্নিত করা হয়েছে। ট্রাম্পের মতে, এই জাদুঘরগুলোতে এমন প্রদর্শনী এবং ভাষা ব্যবহার করা হচ্ছে যা “অনুপযুক্ত।”
আদেশে আরও বলা হয়েছে, ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ আফ্রিকান আমেরিকান হিস্টরি অ্যান্ড কালচার “শ্রম, ব্যক্তি-স্বাতন্ত্র্যবাদ এবং নিউক্লিয়ার পরিবারকে শ্বেতাঙ্গ সংস্কৃতির অংশ” হিসেবে উল্লেখ করেছে। যদিও, জাদুঘর কর্তৃপক্ষ পরে এই বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি শিক্ষামূলক উপকরণ সরিয়ে নেয়।
২০১৭ সালে, ট্রাম্প এই জাদুঘরটি পরিদর্শন করেছিলেন এবং একটি “বিভক্ত দেশকে” একত্রিত করার অঙ্গীকার করেছিলেন। সেই সময়ে তিনি আফ্রিকান আমেরিকান এবং সকল আমেরিকানের জন্য “স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতি” রক্ষার কথা বলেছিলেন।
আদেশে স্মিথসোনিয়ান আমেরিকান আর্ট মিউজিয়ামের একটি ভাস্কর্য প্রদর্শনী এবং আসন্ন আমেরিকান উইমেন’স হিস্টরি মিউজিয়ামের (American Women’s History Museum) একটি পরিকল্পনারও সমালোচনা করা হয়েছে। এই প্রদর্শনীগুলোতে “জাতিগত মনোভাব এবং যুক্তরাষ্ট্রের ধারণাগুলোকে” তুলে ধরা হয়েছে।
এছাড়াও, ট্রাম্পের এই আদেশে, স্বরাষ্ট্র সচিব ডগ বার্গামকে (Doug Burgum) ফিলাডেলফিয়ার ইন্ডিপেন্ডেন্স হল ন্যাশনাল হিস্টোরিক পার্ককে (Independence Hall National Historic Park) সংস্কারের জন্য পর্যাপ্ত তহবিল সরবরাহ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী জুলাই মাসের ৪ তারিখে, এই হলের ২৫০তম বার্ষিকী উদযাপনের প্রস্তুতি হিসেবে এই সংস্কারের কথা বলা হয়েছে।
বার্গামকে আরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তিনি যেন নিশ্চিত করেন যে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা কোনো মূর্তি বা স্মৃতিস্তম্ভ যেন “মার্কিন ইতিহাসের মিথ্যা পুনর্গঠন” প্রচার করে না। এই সময়সীমার মধ্যে, কনফেডারেট অফিসার, কুইনকুইস্টাডোর এবং ঔপনিবেশিক শাসকদের স্মরণে নির্মিত বেশ কয়েকটি স্মৃতিস্তম্ভ অপসারণ করা হয়েছিল, যা জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পরে জাতিগত ন্যায়বিচারের দাবিতে প্রতিবাদের ফল ছিল।
তথ্য সূত্র: সিএনএন