গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় মৃতের সংখ্যা বাড়ছে, ২৪ ঘণ্টায় নিহত ৬৫ জন। গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলার তীব্রতা ক্রমশ বাড়ছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৬৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে নারী, শিশু ও সাংবাদিকও রয়েছেন। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ সোমবার এই তথ্য জানিয়েছে।
হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর এই নতুন আক্রমণ শুরু হয়েছে। গত মঙ্গলবার থেকে ইসরায়েলের এই নতুন আক্রমণ শুরু হয়, যা গাজায় বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের জন্য আবারও এক বিভীষিকা নিয়ে এসেছে।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত সপ্তাহে ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ৭০০ জন নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। এর আগে দুই মাস ধরে সেখানে তুলনামূলকভাবে শান্তি বিরাজ করছিল।
আল জাজিরা মুবাশির চ্যানেলের সাংবাদিক হোসাম শাবাত সোমবার উত্তরা গাজায় নিহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বেইত লাহিয়া এলাকার পূর্বাংশে তার গাড়িতে হামলা চালানো হয়।
এছাড়া, ফিলিস্তিন টুডে-এর সাংবাদিক মোহাম্মদ মনসুরকেও খান ইউনিসে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হতে হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মনসুরকে কোনো আগাম সতর্কতা ছাড়াই তার স্ত্রী ও ছেলের সাথে নিজ বাড়িতে হত্যা করা হয়।
ফিলিস্তিনি সাংবাদিক সিন্ডিকেটের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাস থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ২০৮ জন সাংবাদিক ও গণমাধ্যম কর্মী নিহত হয়েছেন।
ফিলিস্তিনি চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সোমবার গাজা স্ট্রিপে বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয় নেওয়া একটি স্কুলে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত চারজন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে একজন শিশুও রয়েছে। নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে সোমবারের হামলায় আরও ১৮ জন আহত হয়েছে।
আল-আওদা হাসপাতাল হতাহতদের চিকিৎসা দিয়েছে। এছাড়া, আরও তিনটি হাসপাতালে আগের রাতে ও সোমবার ইসরায়েলি হামলায় ২৫ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা কেবল জঙ্গি সংগঠনগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালায় এবং বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতি এড়ানোর চেষ্টা করে।
গাজার দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত সবচেয়ে বড় চিকিৎসা কেন্দ্র, নাসের হাসপাতালেও রবিবার রাতে বোমা হামলা চালানো হয়, যেখানে নিহত হন পাঁচজন। নিহতদের মধ্যে হামাসের একজন রাজনৈতিক নেতাও ছিলেন।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা ব্যাপক গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে, যাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমানো যায়। হামাস নিশ্চিত করেছে যে তাদের রাজনৈতিক অফিসের সদস্য ইসমাইল বারহুম নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজও বারহুমকে হামলার লক্ষ্যবস্তু হিসেবে নিশ্চিত করেছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবর মাস থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে এ পর্যন্ত ৫০,০৮২ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১,১৩,৪০৮ জন।
বর্তমানে, মিশর গাজায় যুদ্ধবিরতি ফিরিয়ে আনার জন্য একটি নতুন প্রস্তাব দিয়েছে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে, হামাস পাঁচজন জীবিত জিম্মিকে মুক্তি দেবে, যাদের মধ্যে একজন মার্কিন-ইসরায়েলিও রয়েছেন।
এর বিনিময়ে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় মানবিক সাহায্য পাঠাতে এবং কয়েক সপ্তাহের জন্য লড়াই বন্ধ করতে রাজি হবে। এছাড়া, ইসরায়েল ফিলিস্তিনের শত শত বন্দীকেও মুক্তি দেবে।
হামাসের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা এই প্রস্তাবের প্রতি ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান