মায়া সভ্যতার এক বিস্ময়কর ইতিহাস।
মধ্য আমেরিকার মায়া সভ্যতা, যা এক সময়ে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও স্থাপত্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল, সেই ইতিহাসের পাতা ওল্টানো যাক। আধুনিক বেলিজ, এল সালভador, গুয়াতেমালা, হন্ডুরাস এবং মেক্সিকোতে বিস্তৃত ছিল এই মায়া জনপদ।
তাদের উত্থান, সমৃদ্ধি, এবং হঠাৎ পতন – এই সবকিছুই আজও মানুষের কাছে এক রহস্য।
প্রায় চার হাজার বছর আগে, খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ অব্দে মায়া সভ্যতার গোড়াপত্তন হয়। তারা ছিল মেসোআমেরিকার আদিবাসী, যারা কৃষি, গণিত এবং স্থাপত্যে রেখে গেছে অসাধারণ দক্ষতার পরিচয়।
তাদের উদ্ভাবনী কৌশলগুলির মধ্যে ছিল উন্নত সেচ ব্যবস্থা এবং শস্য উৎপাদনের জন্য জমি প্রস্তুত করা। ভুট্টা, শিম, স্কোয়াশ এবং মরিচের মতো খাদ্যশস্য ছিল তাদের প্রধান খাদ্য।
সময় গড়ানোর সাথে সাথে ছোট ছোট বসতিগুলো ধীরে ধীরে বড় শহরে পরিণত হয়। খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ অব্দে, তারা বিশাল মন্দির তৈরি করতে শুরু করে, যা তাদের দেবতাদের প্রতি উৎসর্গীকৃত ছিল।
এই মন্দিরগুলিতে মায়া কারিগরদের তৈরি করা মুখোশগুলি দেবতাদের প্রতিচ্ছবি হিসেবে স্থাপন করা হতো।
গণিতের ক্ষেত্রেও মায়াদের অবদান ছিল অসামান্য। তারা বিশ্বের প্রথম সভ্যতা ছিল যারা শূন্যের ধারণা ব্যবহার করতে শুরু করে।
এর মাধ্যমে তারা জটিল গণনা করতে পারতো এবং তাদের ক্যালেন্ডার তৈরি করতে সুবিধা হতো।
২৫০ থেকে ৮০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মায়া সভ্যতা উন্নতির শিখরে পৌঁছেছিল। এই সময়ে তারা বিভিন্ন রাজ্যে বিভক্ত হয়ে শাসনকার্য পরিচালনা করত।
কামাকুল, কোবান, কপান, তিকাল, পালেং এবং ইয়াক্সচিলানের মতো শক্তিশালী শহরগুলো একে অপরের সাথে ব্যবসা করত এবং তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি গড়ে তুলেছিল।
এই সময়ে মায়ারা শিল্পকলা, জ্যোতির্বিদ্যা, ক্যালেন্ডার, গণিত, লিখন পদ্ধতি এবং স্থাপত্যের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি লাভ করে। তাদের নির্মিত বিশাল পিরামিড এবং মন্দিরগুলো আজও তাদের দক্ষতার প্রমাণ বহন করে।
গুয়াতেমালার তিকাল মন্দির এর অন্যতম উদাহরণ।
কিন্তু নবম শতকে মায়া সভ্যতার পতন শুরু হয়। রাজনৈতিক অস্থিরতা, গৃহযুদ্ধ এবং শহরের পর শহর জনশূন্য হতে থাকে।
কেন এমনটা হলো, তা আজও একটি রহস্য। অনেকে উত্তরে চলে যায়, যেখানে চিকেন ইৎজা এবং উক্সমালের মতো নতুন শহর গড়ে ওঠে।
কিন্তু এটি তাদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারেনি।
১২ শতকে কিচে রাজ্যের কুইমার্কাজ-এর মতো নতুন কিছু মায়া জনপদ গড়ে উঠলেও, স্প্যানিশদের আক্রমণের ফলে তারা দুর্বল হয়ে পরে।
স্প্যানিশরা মেসোআমেরিকা জয় করে সেখানকার মূল্যবান ধাতু এবং সম্পদ হস্তগত করতে চেয়েছিল। তারা স্থানীয়দের খ্রিস্ট ধর্মে দীক্ষিত করতেও চেয়েছিল।
১৬৯৭ সালে, মায়াদের শেষ স্বাধীন শহর, নোহপেটেন, স্প্যানিশদের হাতে পরাজিত হয়।
স্প্যানিশদের আগ্রাসনের পরেও, মায়া সংস্কৃতির অনেক কিছুই আজও টিকে আছে। প্রায় আটাশটি মায়া ভাষা আজও প্রচলিত, এবং তাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি তাদের সম্প্রদায়ে আজও বিদ্যমান।
মায়া সভ্যতা, যা একসময় মধ্য আমেরিকায় তাদের জ্ঞান ও দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছিল, তাদের উত্থান-পতন আজও মানুষকে আকৃষ্ট করে।
প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলো গবেষক এবং পর্যটকদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ আকর্ষণ।
মায়া সভ্যতার এই আকর্ষণীয় ইতিহাস নিশ্চয়ই আপনার কৌতূহলকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লেজার