ফ্ল্যানারি ও’কনর: এক শতাব্দীর আলোয় বিতর্কিত সাহিত্য। মার্কিন লেখিকা ফ্ল্যানারি ও’কনরের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর জীবন ও সাহিত্যকর্ম নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
তাঁর গল্পগুলোতে ফুটে ওঠা গভীরতা, মানবিক দুর্বলতা এবং ক্যাথলিক ধর্মীয় প্রভাব আজও সাহিত্যপ্রেমীদের আকৃষ্ট করে। তবে তাঁর বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গির অভিযোগ, যা তাঁর ব্যক্তিগত চিঠিপত্রে প্রকাশ পেয়েছে, তা বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
আজকের লেখায় আমরা এই প্রভাবশালী লেখকের জীবন ও কাজের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করব, একইসাথে তাঁর সাহিত্যকর্মের প্রাসঙ্গিকতা কতটুকু, সে বিষয়ে আলোকপাত করব।
ফ্ল্যানারি ও’কনরের জন্ম ১৯২৫ সালের ২৫শে মার্চ, যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের সাভানা শহরে। অল্প বয়সেই তিনি খ্যাতি লাভ করেন।
তাঁর বাবার অকালমৃত্যু হয়, এবং এর কয়েক বছর পরেই তিনি জানতে পারেন, তিনি অটোইমিউন রোগ লুপাসে আক্রান্ত। এই রোগ তাঁর জীবনকে কঠিন করে তোলে, শারীরিক দুর্বলতা সত্ত্বেও তিনি লেখা চালিয়ে যান।
জীবনের শেষ বছরগুলোতে, তিনি বিশেষভাবে পরিচিত হন তাঁর ছোট গল্পগুলির জন্য। তাঁর গল্পগুলোতে প্রায়শই দেখা যায় ধর্ম, নৈতিকতা এবং সমাজের ভেতরের দ্বন্দ্ব।
ও’কনরের সাহিত্যকর্ম ‘সাউদার্ন গথিক’ ধারার অন্তর্ভুক্ত। এই ধরনের লেখায় প্রায়শই রহস্য, ভীতি এবং বিকৃত চরিত্রের উপস্থিতি দেখা যায়।
তাঁর গল্পগুলোতে শোষিত মানুষের প্রতিচ্ছবি, কুসংস্কারাচ্ছন্নতা, এবং মানুষের ভেতরের অন্ধকার দিকগুলো তুলে ধরা হয়েছে। তাঁর বিখ্যাত কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘ওয়াইজ ব্লাড’ এবং ‘এ গুড ম্যান ইজ হার্ড টু ফাইন্ড’।
এই গল্পগুলিতে মানুষের জীবনের জটিলতা, ভালো-মন্দের ধারণা এবং আধ্যাত্মিকতার অনুসন্ধান বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
তবে ও’কনরের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বিতর্কও রয়েছে। তাঁর কিছু চিঠিতে বর্ণবাদের প্রতি সমর্থন পাওয়া যায়, যা তাঁর সাহিত্যকর্মের মূল্যায়নকে কঠিন করে তোলে।
কেউ কেউ মনে করেন, তাঁর লেখার গভীরতা এবং সমাজের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরার ক্ষমতাকে এই বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখা উচিত। আবার অনেকে মনে করেন, লেখকের ব্যক্তিগত মতামত তাঁর কাজের নৈতিকতাকে প্রভাবিত করে।
সম্প্রতি, ও’কনরের জীবন অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে ‘ওয়াইল্ডক্যাট’ নামক একটি চলচ্চিত্র। ছবিটিতে তাঁর জীবন ও সাহিত্যকর্মের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে, তবে বর্ণবাদের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
এই সিনেমায় ফ্ল্যানারি ও’কনরের চরিত্রে অভিনয় করেছেন মায়া হক।
ফ্ল্যানারি ও’কনরের সাহিত্যকর্ম পাঠকদের মধ্যে গভীর চিন্তার জন্ম দেয়। তাঁর গল্পগুলো একদিকে যেমন মানুষের ভেতরের জটিলতা উন্মোচন করে, তেমনি সমাজের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরে।
তাঁর জীবন এবং কাজ, বিতর্ক সত্ত্বেও, সাহিত্যচর্চার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে আছে। তাঁর লেখাগুলি আজও আমাদের সমাজে প্রাসঙ্গিক, যা মানুষের মনস্তত্ত্ব, নৈতিকতা এবং আধ্যাত্মিকতার গভীর অনুসন্ধানে সহায়তা করে।
তথ্য সূত্র: The Guardian