এখানে যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো রাজ্যের একটি অসাধারণ স্থানের গল্প: রেড রকস অ্যাম্ফিথিয়েটার। ডেনভার শহরের কাছে অবস্থিত এই উন্মুক্ত কনসার্ট হলটি শুধু একটি সাধারণ মঞ্চ নয়, বরং প্রকৃতির এক অপরূপ সৃষ্টি।
এটি সঙ্গীতপ্রেমীদের কাছে এক স্বর্গরাজ্য, যেখানে পাহাড়ের পাথরের মাঝে কনসার্ট উপভোগ করার এক দারুণ অভিজ্ঞতা হয়।
রেড রকসের বয়স শুনলে হয়তো অবাক হবেন! প্রায় ৩০০ মিলিয়ন বছর আগে এই স্থানটির সৃষ্টি। এখানকার লাল পাথরের পাহাড়গুলো সময়ের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
একসময় আদিবাসী আমেরিকান উপজাতি, যেমন— ইউট, শায়েন এবং অ্যারাপাহো— এখানে বসবাস করত। তাদের সংস্কৃতি আর প্রকৃতির এক নিবিড় সম্পর্ক ছিল।
১৯৪১ সালে এখানে যখন অ্যাম্ফিথিয়েটারটি খোলা হয়, তখন আদিবাসী রীতি মেনে অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল। এরপর ধীরে ধীরে এটি সঙ্গীত জগতের গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থানে পরিণত হয়।
এখানে যারা পারফর্ম করেছেন, তাদের মধ্যে বিশ্ববিখ্যাত শিল্পী ও ব্যান্ড দলও রয়েছে। ১৯৬৪ সালে “দ্য বিটলস”-এর কনসার্ট ছিল এখানকার অন্যতম স্মরণীয় ঘটনা।
যদিও টিকিট তেমন বিক্রি হয়নি, তবুও এটি ছিল তাদের প্রথম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সফরে একটি বিশেষ অভিজ্ঞতা। পরবর্তীতে, জিমি হেন্ডরিক্স, ব্রুস স্প্রিংস্টিন, নিল ইয়ং, বব ডিলান, এবং ইউটুর মতো কিংবদন্তি শিল্পীরা এখানে পারফর্ম করেছেন।
কনসার্টের আগের পরিবেশটাও বেশ উপভোগ করার মতো। স্থানীয়রা কাছাকাছি শহর মরিসনের রেস্টুরেন্ট ও বারে ভিড় করে, যেখানে মজাদার খাবার ও পানীয়ের আয়োজন থাকে।
কনসার্টের আগে গাড়ি পার্কিংয়ে বসে সকলে মিলে আড্ডা ও খাওয়া দাওয়ার একটা মজাদার সংস্কৃতিও এখানে দেখা যায়, যা ‘টেলগেটিং’ নামে পরিচিত। কনসার্টের সময় একদিকে যেমন মঞ্চের আলো ঝলমলে পরিবেশ, তেমনই অন্যদিকে দূরের শহরের আলো—সব মিলিয়ে এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য তৈরি হয়।
শুধু কনসার্ট উপভোগের জন্যই নয়, রেড রকস তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যও বিখ্যাত। ৭৩৮ একরের বিশাল রেড রকস পার্কে হাইকিং ও বাইকিং-এর জন্য চমৎকার কিছু পথ রয়েছে।
যারা ট্রেকিং ভালোবাসেন, তাদের জন্য এখানে রয়েছে ‘জিওলজিক ওভারলুক ট্রেইল’ এবং ‘রেড রকস ট্রেইল’-এর মতো সুন্দর পথ।
যারা সঙ্গীত ভালোবাসেন এবং প্রকৃতির কাছাকাছি সময় কাটাতে চান, তাদের জন্য রেড রকস অ্যাম্ফিথিয়েটার একটি অসাধারণ গন্তব্য হতে পারে। এখানকার হল অফ ফেম-এ বিভিন্ন শিল্পীর স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষিত আছে, যা ২০২৩ সাল থেকে সংস্কারের পর ২০২৫ সালের মার্চ মাসে পুনরায় চালু হওয়ার কথা রয়েছে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক