এফকেএ টইগস: শিল্পীসত্তার অন্য এক সংজ্ঞা। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী এফকেএ টইগস।
তাঁর আসল নাম তাহলিয়া ডেবরেট বার্নেট। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এই শিল্পী একইসঙ্গে সঙ্গীতশিল্পী, নৃত্যশিল্পী, অভিনেত্রী এবং মডেল হিসেবে পরিচিত।
সম্প্রতি তাঁর নতুন অ্যালবাম ‘ইউসেক্সুয়া’ মুক্তি পেয়েছে। এই অ্যালবামের প্রেক্ষাপটে, শিল্পী হিসেবে তাঁর বিবর্তন, ব্যক্তিগত জীবন এবং শিল্পের প্রতি তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।
এফকেএ টইগস-এর বয়স এখন সাঁইত্রিশ। গ্ল্যামারের দুনিয়ায় তাঁর যাত্রা মোটেও মসৃণ ছিল না।
শৈশবে তিনি বেড়ে উঠেছেন ইংল্যান্ডের গ্লুচেস্টারশায়ারের একটি ছোট শহরে। কৈশোরে তিনি ব্রিস্টল স্কুলে ভর্তি হন।
১২ বছর বয়সে তিনি পেশাদার নৃত্যশিল্পী হিসেবে কাজ শুরু করেন। এরপর কাইলি মিনোগ, জেসি জে এবং এড শিরানের মতো শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পান।
তাঁর নাচের ধরন এবং সঙ্গীতের স্বতন্ত্রতা খুব দ্রুত সকলের নজর কাড়ে।
তাঁর সঙ্গীতজীবন শুরু হয় অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, “আমি সবসময় একটু অন্তর্মুখী ছিলাম।
পপ গানের দুনিয়ায় অন্যদের মতো সহজে মিশে যেতে পারিনি। কিন্তু আমি জানতাম, শিল্পী হিসেবে নিজের পরিচয় তৈরি করতে হলে, আমাকে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
তাঁর গানের কথা ও সুরের গভীরতা শ্রোতাদের আকৃষ্ট করে। সঙ্গীতের বাইরে ফ্যাশন এবং অভিনয় জগতেও তিনি পরিচিত মুখ।
বিভিন্ন ফ্যাশন শো-তে তাঁর উপস্থিতি সবসময়ই বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
তাঁর শিল্পীসত্তার উন্মোচনে ব্যক্তিগত জীবনের কিছু ঘটনার প্রভাব রয়েছে। একসময় অভিনেতা শিয়া লাবিফের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল।
সেই সময় মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তিনি। যদিও শিয়া লাবিফ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, সেই ঘটনার অভিঘাত এফকেএ টইগসের শিল্পীজীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছে।
তাঁর নতুন অ্যালবামেও সেই অভিজ্ঞতার ছায়া খুঁজে পাওয়া যায়।
এফকেএ টইগস-এর মতে, একজন শিল্পী হিসেবে নিজের কণ্ঠস্বর খুঁজে পাওয়াটা খুব জরুরি। তিনি বলেন, “আমি সবসময় চেয়েছি, আমার শরীর যেন আমার ভাবনা প্রকাশের মাধ্যম হয়।
ছোটবেলায় মা’কে দেখতাম, তিনি সালসা নাচতেন। তিনিই আমার মধ্যে কৌতূহল তৈরি করেন, যিনি সবসময় নতুন কিছু করতে উৎসাহ দিতেন।” তিনি আরও যোগ করেন, “নিজেকে প্রকাশ করার ক্ষেত্রে শরীরের স্বাধীনতা খুব জরুরি।
আমি সবসময় চেয়েছি আমার শরীর যেন যেকোনো রূপে নিজেকে প্রকাশ করতে পারে।”
সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে শিল্পীদের টিকে থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এখনকার দিনে, শিল্পীদের ভালো-খারাপ দুটোই নির্ভর করে ভক্তদের উপর।
তবে আসল শিল্পীদের নিজেদের মৌলিকত্ব বজায় রাখতে সমস্যা হয়।” তাঁর কাজের ধারা সবসময়ই পরীক্ষামূলক এবং নিরীক্ষামূলক।
প্রচলিত ধ্যান-ধারণা ভেঙে তিনি নতুন কিছু সৃষ্টি করতে চান। তাঁর গান, নাচ বা অভিনয়—প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি নিজেকে অন্যভাবে উপস্থাপন করেন।
এফকেএ টইগস-এর শিল্পীসত্তার এই বিবর্তন প্রমাণ করে, একজন শিল্পী হিসেবে তিনি কতটা আত্মবিশ্বাসী এবং দৃঢ়চেতা।
নিজের ভেতরের আলোটিকে বাঁচিয়ে রাখার এই লড়াইয়ে তিনি সবসময় জয়ী হতে চান। তাঁর কাজ শুধু একটি গান বা নাচের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি একটি জীবনবোধ, যা যুগে যুগে শিল্পীদের অনুপ্রাণিত করে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান