শিরোনাম: সঙ্গীতের সুরে বাঁধা: এক পিতার চোখে অটিস্টিক ছেলের বেড়ে ওঠা, বইয়ের পাতায় ভালোবাসার গল্প
ছোট্ট জেমস, বাবার সাথে পল ম্যাককার্টনির কনসার্টে গিয়ে এতটাই বিভোর যে, যেন অন্য জগৎ-এ চলে গেছে। বাবার চোখে, জেমসের এই অন্যরকম জগৎ-এর শুরুটা, একজন সাধারণ শিশুর মতোই ছিল। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে, যখন জেমসের অটিজম ধরা পড়ল, তখন থেকেই তাদের পথচলাটা অন্যরকম হয়ে যায়।
জন হ্যারিস তার “মেবি আই’ম অ্যামেজড: আ স্টোরি অফ লাভ অ্যান্ড কানেকশন ইন টেন সংস” বইটিতে এই জার্নির কথাই লিখেছেন।
বইটি মূলত বাবা ও ছেলের ভালোবাসার গল্প, যেখানে সঙ্গীতের এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। জেমসের প্রিয় ব্যান্ড ছিল বিটলস। তাদের গানগুলো যেন জেমসের কাছে এক একটি আশ্রয়স্থল। গানের সুরের মাধ্যমে বাবা-ছেলের মধ্যে তৈরি হয়েছে এক গভীর সম্পর্ক।
বইটিতে ১০টি অধ্যায় রয়েছে, প্রত্যেকটির নামকরণ করা হয়েছে একটি গানের নামে, যা তাদের জীবনের কোনো না কোনো গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের সাথে জড়িত। জন হ্যারিস অত্যন্ত সহজ ভাষায়, ঘটনার ঘনঘটা বর্ণনা করেছেন, যা পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
জেমসের সঙ্গীতের প্রতি গভীর অনুরাগ ছিল, ছিল অসাধারণ ক্ষমতা। সে যেকোনো সুর শুনলেই বলে দিতে পারত কোন নোট বাজানো হচ্ছে। স্পটিফাই-এ গান শুনেই সে চিনে ফেলত গানের আসল সুর। বাবার চোখে, এই ক্ষমতা ছিল এক বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা।
হ্যারিস তাঁর ছেলের অটিজম নিয়ে উদ্বেগের কথা যেমন লিখেছেন, তেমনি জেমসের ভালো লাগা, তার জগৎ-এর নানা দিক তুলে ধরেছেন। উদাহরণস্বরূপ, চিড়িয়াখানায় অন্যান্য প্রাণীর চেয়ে কাঠের গুঁড়োর প্রতি জেমসের আকর্ষণ, হ্যারিসের চোখে হয়তো স্বাভাবিক ছিল না, কিন্তু সন্তানের জগৎ-কে তিনি গভীর ভালোবাসায় উপলব্ধি করতে চেয়েছেন।
তবে, অটিজম-এর বিষয়টি নিয়ে লিখতে গিয়ে লেখক, একজন অটিস্টিক মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে অনেক কিছুই হয়তো উপলব্ধি করতে পারেননি। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য সমাজে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাব রয়েছে। হ্যারিস এবং তাঁর স্ত্রী, জেমসের চিকিৎসার জন্য অনেক অর্থ খরচ করেছেন।
সরকারি সহায়তা পেতেও তাদের নানান কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। বাংলাদেশেও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা এবং সামাজিক সচেতনতার অভাব রয়েছে। অনেক পরিবারই তাদের সন্তানদের নিয়ে একাকীত্বে ভোগেন।
জন হ্যারিসের এই বইটি, ভালোবাসার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বইটি শুধু একটি ছেলের বেড়ে ওঠার গল্প নয়, বরং বাবা-ছেলের গভীর সম্পর্কের এক অনন্য দলিল। বইটির মাধ্যমে, অটিজম সম্পর্কে সমাজে সচেতনতা বাড়বে, এবং বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হবে, এমনটাই প্রত্যাশা করা যায়।
বইটির দাম: ১৬.৯৯ পাউন্ড (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী, প্রায় ২,৪০০ টাকার কাছাকাছি)।
তথ্য সূত্র: The Guardian