ডাক্তার ক্রিপেন, কুখ্যাত এই খুনির কথা আজও মানুষের মনে গেঁথে আছে। তাঁর শিকার, বেলে এলমোরের কথা কি আমরা মনে রেখেছি?
সম্প্রতি, ইতিহাসবিদ হ্যালি রুবেনহোল্ড তাঁর নতুন বই ‘স্টোরি অফ আ মার্ডার’-এ তুলে ধরেছেন বেলে এলমোরের জীবনকথা। এই বইয়ে ক্রিপেনের অপরাধের চেয়েও বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বেলে এলমোরের জীবনের প্রতি।
লন্ডনের এক ক্যাফেতে বসে লেখক রুবেনহোল্ড জানান, সত্যি ঘটনা নির্ভর অপরাধ বিষয়ক লেখার প্রতি তাঁর আগ্রহ নেই বললেই চলে।
তাঁর মতে, এই ধরনের লেখায় অপরাধীর প্রতিই বেশি মনোযোগ দেওয়া হয়, যাঁর শিকার হওয়া নারীর কথা ঢাকা পড়ে যায়। জ্যাক দ্য রিপারের শিকার নারীদের নিয়ে লেখা তাঁর আগের বই ‘দ্য ফাইভ’-এর সাফল্যের পর, রুবেনহোল্ড-এর ওপর প্রত্যাশার চাপ ছিল অনেক।
তবে সমালোচকদের তোপের মুখেও তিনি অবিচল ছিলেন।
আশির দশকের শেষের দিকে, নিউ ইয়র্কে এসেছিলেন আয়ারল্যান্ডের এক অভিবাসী তরুণী, শার্লট বেল। সেখানেই ডাক্তার ক্রিপেনের সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়।
এরপর তাঁদের বিয়ে হয় এবং তাঁরা সল্ট লেক সিটিতে বসবাস শুরু করেন। সেখানে শার্লটের আকস্মিক মৃত্যু হয়। এরপর ক্রিপেন নিউ ইয়র্কে ফিরে আসেন এবং বেলে এলমোরকে বিয়ে করেন।
বেশ কয়েক বছর পর, তাঁরা লন্ডনে আসেন এবং একটি বাড়িতে বসবাস করতে শুরু করেন। এখানেই ঘটে সেই চাঞ্চল্যকর ঘটনা, যা ইতিহাসে অমর হয়ে আছে।
রুবেনহোল্ড তাঁর বইয়ে দেখিয়েছেন, কীভাবে বেলে এলমোরকে খলনায়িকা হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে।
এমনকি, ১৯২০ সালের একটি লেখায় ক্রিপেন ও তাঁর প্রেমিকা এথেলকে সুন্দর সম্পর্কের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হয়, যেখানে বেলেকে উপস্থাপন করা হয় এক ভয়ঙ্কর নারী হিসেবে। রুবেনহোল্ড মনে করেন, এই ধরনের ধারণা থেকেই ভিকটিমকে খাটো করে দেখানোর প্রবণতা তৈরি হয়।
বেলের বন্ধুরা, বিশেষ করে তাঁর সঙ্গীত শিল্পী বন্ধুরা, তাঁর নিখোঁজ হওয়ার পরে সন্দেহ প্রকাশ করেন।
ক্রিপেন দাবি করেছিলেন, বেলে আমেরিকায় ফিরে গিয়েছেন। কিন্তু বেলের জিনিসপত্র, পোশাক— কিছুই তো তিনি নিয়ে যাননি!
এরপর এথেলকে বেলের গয়না পরে একটি অনুষ্ঠানে দেখা গেলে, তাঁদের সন্দেহ আরও বাড়ে। পুলিশের অনুসন্ধানে জানা যায়, বেলেকে হত্যা করা হয়েছে এবং তাঁর দেহ টুকরো টুকরো করে বাড়ির বেসমেন্টে লুকিয়ে রাখা হয়েছে।
রুবেনহোল্ডের মতে, এই বইটি লেখার মূল উদ্দেশ্য ছিল, বেলে এলমোরের জীবনের প্রতি সুবিচার করা।
তিনি প্রমাণ করতে চেয়েছেন, একজন নারীর জীবন কতটা গুরুত্বপূর্ণ। ক্রিপেনের মতো কুখ্যাত খুনির চেয়েও, তাঁর শিকারের জীবন বেশি আলোচনার দাবিদার। তাঁর এই কাজটি, নারী বিদ্বেষের বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী প্রতিবাদ।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান