টেনিস তারকা গাবি ডাবরওস্কি: ক্যান্সার জয় করে কোর্টে ফেরার অদম্য সাহস
ক্যানসার! নামটি শুনলেই যেন শরীরটা হিম হয়ে আসে। কিন্তু এই মরণব্যাধিকে জয় করে আবারও সাফল্যের শিখরে ওঠা যায়, তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন কানাডার টেনিস খেলোয়াড় গাবি ডাবরওস্কি।
গত বছর স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার কঠিন সময়েও তিনি কোর্টে ফিরে এসেছেন, জিতেছেন ব্রোঞ্জ পদক, সেই সঙ্গে পেয়েছেন ডব্লিউটিএ ফাইনালসের শিরোপা। তাঁর এই ফিরে আসা শুধু খেলাধুলায় নয়, বরং জীবনের পথে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
২০২৩ সালের বসন্তে ডাবরওস্কি নিজের বাঁ স্তনে একটি পিণ্ড অনুভব করেন। শুরুতে ডাক্তারের পরামর্শে বিষয়টি তেমন গুরুত্ব দেননি তিনি।
কিন্তু পরের বছর, মহিলাদের টেনিসের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডব্লিউটিএ-এর স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময় চিকিৎসকরা তাঁকে দ্রুত স্ক্রিনিং করার পরামর্শ দেন। এরপর দ্রুতই পরিস্থিতি কঠিন হয়ে ওঠে।
ম্যামোগ্রাম, আলট্রাসাউন্ড এবং বায়োপসি—সব পরীক্ষার ফল হাতে আসার পর জানা যায়, তিনি স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত।
তবে এরপর ভালো খবরও আসতে শুরু করে। রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ায় এবং শরীরে ক্যানসার বেশি না ছড়ানোয় তিনি কেমোথেরাপির মতো কঠিন চিকিৎসা থেকে মুক্তি পান।
ডাবরওস্কি বলেন, “বিষয়টি ভীতিকর ছিল, তবে আমি কৃতজ্ঞ যে দ্রুত এর চিকিৎসা শুরু করা গেছে।”
ক্যানসারের সঙ্গে লড়াইয়ের এই সময়ে ডাবরওস্কির জীবনে আসে এক নতুন উপলব্ধি। খেলাটাকে তিনি এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি উপভোগ করতে শুরু করেন।
তিনি উপলব্ধি করেন, সাফল্যের চাবিকাঠি হলো নিজের কাজটি ভালোবাসতে পারা। কঠিন সময়েও তিনি অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ পদক জেতেন, যা তাঁর শৈশবের স্বপ্নপূরণ করে।
এর আগে, তিনি উইম্বলডনে মিশ্র দ্বৈত বিভাগে রানার্স-আপও হয়েছিলেন।
ডাবরওস্কি মনে করেন, ক্যানসার তাঁর জীবনকে নতুনভাবে দেখতে শিখিয়েছে। খেলাধুলাকে পেশা হিসেবে পাওয়াটা তাঁর কাছে এখন অনেক বেশি আনন্দের।
তিনি বলেন, “আমি আমার পেশা হিসেবে টেনিস খেলতে পেরে খুবই কৃতজ্ঞ। গত বছর আমি যে ফলগুলো পেয়েছি, তা আসলে চেয়ে পাওয়ার চেয়ে উপভোগ করার ফল ছিল।”
ডব্লিউটিএ খেলোয়াড়দের জন্য বার্ষিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার আয়োজন করে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে খেলোয়াড়দের শারীরিক গঠন, হাড়ের ঘনত্ব, মানসিক স্বাস্থ্য এবং প্রজনন স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন বিষয়গুলো নিরীক্ষণ করা হয়।
খেলোয়াড়দের জন্য রক্ত পরীক্ষাও করা হয়।
স্তন ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সচেতনতা বাড়াতে চান ডাবরওস্কি। তাঁর মতে, প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত করা গেলে, এই ক্যানসার থেকে survival rate ৯৯ শতাংশ পর্যন্ত।
তিনি চান, নারীরা যেন তাঁদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হন এবং কোনো সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেন।
আমাদের দেশেও নারীদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ছে, যা একটি ইতিবাচক দিক। স্তন ক্যানসার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে।
তবে এখনো অনেক ক্ষেত্রে রোগ সম্পর্কে সচেতনতার অভাব দেখা যায়।
তাই, ডাবরওস্কির এই গল্প আমাদের সবার জন্য, বিশেষ করে নারীদের জন্য, একটি অনুপ্রেরণা হতে পারে।
আসুন, আমরা সবাই স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন হই এবং কোনো সমস্যা হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিই।
তথ্য সূত্র: সিএনএন