ফরাসি চরম-ডানপন্থী দলের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক: অতীতের বিতর্কিত অধ্যায়
সাম্প্রতিক সময়ে, ফরাসি চরম-ডানপন্থী ন্যাশনাল র্যালি পার্টির (পূর্বে ন্যাশনাল ফ্রন্ট) নেতা জর্দান বারদেলার ইসরায়েলে একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনে বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনা একদিকে যেমন রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত দেয়, তেমনই ইসরায়েলের পররাষ্ট্রনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের চিত্র তুলে ধরে।
খবর অনুযায়ী, এই সিদ্ধান্ত ইসরায়েল সরকারের, যারা বিশ্বজুড়ে নতুন মিত্র খুঁজে বেড়াচ্ছে।
এই আমন্ত্রণ বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ ন্যাশনাল র্যালি পার্টির প্রতিষ্ঠাতা জ্যাঁ-মারি লে পেন একসময় নাৎসিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখেছিলেন। দলের অতীতের এই বিতর্কিত ইতিহাস সত্ত্বেও, বারদেলাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, যা একটি উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক পদক্ষেপ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনার মূল কারণ হলো—ফিলিস্তিন ইস্যুতে মুসলিমদের প্রতি সহানুভূতিশীলদের একজোট হয়ে ইসরায়েলকে একঘরে করার চেষ্টা, যা রুখতে ডানপন্থী দলগুলোর সমর্থন চাইছে ইসরায়েল।
এমনকি, ফরাসি ইহুদি সম্প্রদায়ের একাংশও এখন চরম-ডানপন্থীদের প্রতি সহানুভূতি দেখাচ্ছে, যাদের তারা ইসলামপন্থীদের সম্ভাব্য হুমকি থেকে নিজেদের রক্ষাকবচ হিসেবে দেখছে।
ফ্রান্সে ২০২০ সালে ইহুদি বিদ্বেষের ঘটনা আগের তুলনায় কয়েকগুণ বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে, চরম-ডানপন্থী দলগুলো নিজেদের ‘ইহুদিদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে তুলে ধরছে।
তবে, বারদেলার এই আমন্ত্রণ নিয়ে তীব্র সমালোচনাও হচ্ছে। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, চরম-ডানপন্থীদের সঙ্গে ইসরায়েলের এই ঘনিষ্ঠতা উভয় পক্ষের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
ইসরায়েলের সাবেক কূটনীতিক ড্যানিয়েল শেকের মতে, বারদেলার এই আমন্ত্রণ “অনেক আগে থেকেই আসার কথা ছিল”। তিনি আরও বলেন, বর্তমান ইসরায়েলি সরকার মনে করে, “একমাত্র মুসলিম ও চরম বামপন্থীরাই ইহুদি বিদ্বেষী।”
তবে, এই সম্পর্ক নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত ইসরায়েলি সমাজ। অনেকে মনে করেন, ন্যাশনাল র্যালি পার্টি অতীতের অনেক ভুল শুধরেছে এবং এখন তাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা যেতে পারে।
আবার অনেকের মতে, এই ধরনের দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়া উচিত নয়।
ফরাসি দার্শনিক বার্নার্ড হেনরি-লেভি এবং অ্যান্টি-ডিফেমেশন লীগের (এডিএল) প্রধান জোনাথন গ্রিনব্লাট সহ আরও অনেকে বারদেলার সম্মেলনে বক্তা হওয়ার আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছেন।
তাদের মতে, এমন একটি দলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা কঠিন, যাদের নেতারা এখনো পর্যন্ত তাদের অতীতের কর্মকাণ্ডের জন্য অনুতপ্ত নন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একটি নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত দেয়, যেখানে বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক দলগুলো তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য পুরনো মিত্রতা ত্যাগ করতে দ্বিধা করছে না।
তথ্য সূত্র: সিএনএন