মঙ্গলগ্রহের ধূলিকণা: মহাকাশচারীদের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি?
মঙ্গল গ্রহে অভিযান ভবিষ্যতে মহাকাশচারীদের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসতে পারে। সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে, লাল গ্রহের ধূলিকণা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
এই ধূলিকণায় থাকা কিছু উপাদান, যেমন সিলিকা, জিপসাম, পারক্লোরেটস এবং লোহার অক্সাইড, তাদের শরীরে প্রবেশ করে ফুসফুসের ক্ষতি, থাইরয়েডের সমস্যা এবং রক্তকণিকা তৈরিতে বাধা দিতে পারে।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (University of Southern California) চিকিৎসা বিভাগের অধ্যাপক জাস্টিন ওয়াং (Justin Wang) এই গবেষণা প্রসঙ্গে জানান, “ধূলিকণার কণাগুলো খুবই সূক্ষ্ম হওয়ায় তা সহজে শ্বাসপ্রশ্বাস এর মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশ করতে পারে। এর ফলে ফুসফুসে প্রদাহ হতে পারে এবং কিছু কণা রক্তপ্রবাহে মিশে যেতে পারে।
গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, মঙ্গলের মাটিতে পাওয়া যাওয়া পারক্লোরেট নামক রাসায়নিক উপাদান অতিরিক্ত মাত্রায় থাকলে তা শরীরে থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে এবং এমন এক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে যেখানে শরীর পর্যাপ্ত রক্তকণিকা তৈরি করতে পারে না।
এটিকে অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া (aplastic anemia) বলা হয়।
মঙ্গল থেকে পৃথিবীতে ফিরতে অনেক সময় লাগবে, সেই কারণে মহাকাশচারীদের এই ধূলিকণা থেকে বাঁচতে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে।
এর মধ্যে অন্যতম হলো— বিশেষ ধরনের ফিল্টার ব্যবহার করে ধূলিকণা মুক্ত বাতাস তৈরি করা, কেবিন নিয়মিত পরিষ্কার রাখা এবং ইলেক্ট্রোস্ট্যাটিক রিপালশন ডিভাইস ব্যবহার করা।
ইউনিভার্সিটি অফ কলোরাডো-এর ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ব্রায়ান হাইনেক (Brian Hynek) জানিয়েছেন, “ধূলিকণা সবসময় আকাশ থেকে ঝরে পড়ে এবং সবকিছু ঢেকে দেয়। কয়েক বছর পর পর বড় ধরনের ধূলিঝড় হয়, যা পুরু আস্তরণ তৈরি করে।
এর ফলে মহাকাশযান, যানবহন, সৌর প্যানেল এবং অন্যান্য সরঞ্জামের কার্যকারিতা বজায় রাখতে অতিরিক্ত মনোযোগ দিতে হবে।
লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর স্পেস-এর গবেষক জুলিয়া কার্টরাইট (Julia Cartwright) জানান, “পৃথিবীর ধূলিকণার থেকে মঙ্গল গ্রহের ধূলিকণা আলাদা। এখানকার কণাগুলো খুবই ধারালো এবং সূক্ষ্ম, যা শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলে ফুসফুসের ক্ষতি করতে পারে।
এই সমস্যা থেকে বাঁচতে উন্নত প্রযুক্তির ফিল্টার ব্যবহার করা জরুরি।
তবে, কার্টরাইট আরও উল্লেখ করেছেন, “এই ফিল্টারগুলো নিয়মিত পরিবর্তন করতে হবে এবং মহাকাশযানে পর্যাপ্ত ফিল্টার মজুত রাখতে হবে।
লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের মহাকাশ পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক জোনাথন ইস্টউড (Jonathan Eastwood) মনে করেন, মঙ্গল গ্রহে এই ধরনের বিপদ মোকাবিলায় উন্নত এবং সমন্বিত সমাধান প্রয়োজন।
তিনি বলেন, “পৃথিবী থেকে মঙ্গলের দূরত্ব অনেক হওয়ায় দ্রুত মানুষজনকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। তাই, সেখানে চিকিৎসা সহায়ক সব ব্যবস্থা রাখতে হবে।
যুক্তরাজ্য মহাকাশ সংস্থার সিনিয়র এক্সপ্লোরেশন রিসার্চ ম্যানেজার নাটালিয়া জাভিনা-জেমস (Natalya Zavina-James) জানিয়েছেন, “এই গবেষণা মহাকাশচারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো তুলে ধরেছে।
ভবিষ্যতে মানুষবাহী মহাকাশ অভিযানের আগে এই ধরনের বিষয়গুলো ভালোভাবে বিবেচনা করা উচিত।
যদিও এই ধূলিকণা একটি বড় সমস্যা, তবে বিজ্ঞানীরা মনে করেন, সঠিক প্রস্তুতি এবং উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে এই ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
তথ্য সূত্র: সিএনএন