শিরোনাম: ২০,০০০ বছর আগের তিমি হাড়ের হাতিয়ার: প্রাচীন মানুষের উদ্ভাবনী ক্ষমতার প্রমাণ
বিজ্ঞানীরা প্রায় ২০,০০০ বছর আগের তিমি হাড় থেকে তৈরি করা হাতিয়ারের সন্ধান পেয়েছেন, যা মানব সভ্যতার ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার।
এই হাতিয়ারগুলো স্প্যান ও ফ্রান্সের কাছাকাছি, “বে অফ বিস্কে” অঞ্চলে পাওয়া গেছে। শিকারের জন্য ব্যবহৃত এই সরু আকারের অস্ত্রগুলো মানুষের প্রাচীন উদ্ভাবনী ক্ষমতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
বহু বছর ধরেই বিজ্ঞানীরা এই অঞ্চলে খনন কাজ চালাচ্ছিলেন এবং তাঁদের হাতে আসে তিমি হাড়ের তৈরি কিছু হাতিয়ার। কিন্তু সেগুলোর বয়স নির্ধারণ করা কঠিন ছিল।
আধুনিক প্রযুক্তি, বিশেষ করে গত এক দশকে উন্নত ডেটিং পদ্ধতির মাধ্যমে, এই হাতিয়ারগুলোর বয়স সঠিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হয়েছে। জানা গেছে, এগুলো প্রায় ২০,০০০ বছর আগের।
বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন যে এই হাড়গুলো নীল তিমি, ফ্লিপার তিমি এবং স্পার্ম তিমির মতো বিভিন্ন প্রজাতির তিমি থেকে এসেছে।
পশ্চিম ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ভিকি szabo, যিনি তিমি শিকারের ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করেন, তিনি এই আবিষ্কার সম্পর্কে বলেন, “মানুষ এবং তিমির মধ্যে যে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক, এই আবিষ্কার তারই প্রমাণ।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, প্রাচীনকালে মানুষ সম্ভবত সমুদ্রের কাছাকাছি আসা তিমির মৃতদেহ থেকে এই হাড় সংগ্রহ করত এবং তা দিয়ে শিকারের সরঞ্জাম তৈরি করত।
ধারণা করা হয়, তারা এই হাতিয়ারগুলো হরিণ বা বাইসনের মতো প্রাণী শিকারের কাজে ব্যবহার করত।
ফ্রান্সের ন্যাশনাল সেন্টার ফর সাইন্টিফিক রিসার্চের বিজ্ঞানী জ্যাঁ-মার্ক পেটিলোঁ-এর মতে, এই আবিষ্কার উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরে।
তিনি বলেন, “এই আবিষ্কার প্রমাণ করে, প্রাচীনকালে মানুষের জীবন ধারণের জন্য উপকূলীয় পরিবেশ কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।” সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে উপকূলরেখাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এমন প্রমাণ খুঁজে বের করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
আফ্রিকা ও প্রশান্ত মহাসাগরের বিভিন্ন স্থানেও তিমি হাড়ের হাতিয়ারের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
“নেচার কমিউনিকেশনস” জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণা মানব ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় উন্মোচন করেছে। এই আবিষ্কার একদিকে যেমন মানুষের উদ্ভাবনী ক্ষমতাকে তুলে ধরে, তেমনিভাবে পরিবেশের সঙ্গে মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ককেও নতুন করে ভাবতে শেখায়।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস