হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ, যা সাদা বালুকাময় সমুদ্র সৈকত আর মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য সুপরিচিত, তার গভীরে লুকিয়ে আছে এক সমৃদ্ধ সংস্কৃতি আর দীর্ঘ ইতিহাস। প্রশান্ত মহাসাগরের এই দ্বীপগুলি শুধু পর্যটকদের আকর্ষণ কেন্দ্রই নয়, বরং এখানকার আদিবাসী হাওয়াইয়ান (Hawaiian আদিবাসী) জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি, ঐতিহ্য আর প্রকৃতির প্রতি গভীর ভালোবাসার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
সম্প্রতি জানা গেছে, হাওয়াইয়ের সংস্কৃতি সেখানকার স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রায় আজও কিভাবে মিশে আছে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট থেকে জানা যায়, হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের আদিবাসীদের জীবনযাত্রা একসময় বাইরের জগতের মানুষের সংস্পর্শে আসার ফলে নানাভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। উনিশ শতকে এখানে মিশনারীদের আগমন ঘটে, চিনি শিল্পের প্রসার হয় এবং কুইন লিলিওকালানির (Queen Lili‘uokalani) শাসন ক্ষমতা অবৈধভাবে কেড়ে নেওয়া হয়।
এই ঘটনাগুলি হাওয়াইয়ানদের সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রায় গভীর প্রভাব ফেলেছিল। কিন্তু এত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও, হাওয়াইয়ানরা তাদের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রেখেছে, যা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।
হাওয়াইয়ানদের কাছে ‘আইনা’ (land) বা ভূমি শুধু একটি স্থান নয়, এটি তাদের পূর্বপুরুষদের সঙ্গে আত্মার সম্পর্ক স্থাপনের এক মাধ্যম। তাদের বিশ্বাস, এই ভূমি থেকেই তাদের জন্ম এবং এই ভূমির প্রতি তারা গভীর শ্রদ্ধাশীল।
হাওয়াইয়ান ঐতিহাসিক ইভান মোকুয়াহি হেইস (Evan Mokuahi Hayes) এর মতে, “হাওয়াইয়ের প্রকৃতি মানুষকে নিরাশ করে না, বরং তাদের ক্ষত সারিয়ে তোলে।” এই অনুভূতি তাদের সংস্কৃতিতে গভীরভাবে প্রোথিত।
হাওয়াইয়ান সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হল ‘হুলানৃত্য’ (Hula)। হুলানৃত্য শুধু একটি নৃত্যশৈলীই নয়, এটি তাদের ইতিহাস এবং সংস্কৃতির জীবন্ত রূপ। ‘কুমু হুলা’ (Kumu Hula) বা হুলানৃত্যের শিক্ষকেরা এই নাচের মাধ্যমে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তাদের ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।
হুলানৃত্য হলো কথার দৃশ্যমান রূপ, যা তাদের জীবনের গল্প বলে।
আদিবাসী হাওয়াইয়ানরা তাদের সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখার জন্য আজও লড়াই করে যাচ্ছেন। তাদের এই সংগ্রাম, বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নিজেদের সংস্কৃতি রক্ষার লড়াইয়ের কথা মনে করিয়ে দেয়।
উভয় সম্প্রদায়ের মানুষই তাদের ভূমি, ভাষা এবং ঐতিহ্যকে ভালোবাসে এবং তা টিকিয়ে রাখতে চায়।
হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের সংস্কৃতি, প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা এবং প্রতিরোধের গল্প আমাদের সকলকে অনুপ্রাণিত করে।
তাদের সংস্কৃতি রক্ষার এই সংগ্রাম, বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষকে একত্রিত করে, তাদের ঐতিহ্যকে আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করে।
তথ্য সূত্র: Travel and Leisure