ছোট্ট প্রাণীদের জগৎ: কিভাবে তারা টিকে থাকে?
পৃথিবীতে প্রাণীদের জীবনযাত্রা এক বিচিত্র খেলা। জন্ম থেকে শুরু করে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে তাদের টিকে থাকার জন্য লড়তে হয়। আর এই লড়াইয়ে সবচেয়ে কঠিন সময়টা পার করতে হয় শিশুদের।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের জন্য ছবি তোলেন এমন একজন আলোকচিত্রী জোয়েল সারটোর, যিনি তার ‘ফটো আর্ক’ প্রকল্পের জন্য বিভিন্ন প্রাণীর ছবি তোলেন। তার তোলা ছবিগুলোর মধ্যে শিশুদের ছবিগুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
জোয়েল সারটোরের তোলা ছবিগুলোর মধ্যে একটি মালয়েশিয়ান টেপিরের (Malayan tapir) ছবি তার খুব পছন্দের। মিনেসোটা চিড়িয়াখানায় তোলা টেপিরের ছবিটি তার চোখে লেগে আছে। টেপিরের বাচ্চাটির শরীরে সাদা ও কালো ডোরাকাটা দাগ ছিল, যা তাকে বনের মধ্যে লুকিয়ে থাকতে সাহায্য করে।
প্রকৃতির এই কৌশলটি তাদের শিকারীদের থেকে বাঁচায়।
বন্য পরিবেশে, শিশুদের টিকে থাকার জন্য তিনটি প্রধান উপায় দেখা যায়: লুকিয়ে থাকা, দ্রুত পালিয়ে যাওয়া, অথবা বাবা-মায়ের সাহায্য নেওয়া।
কিছু প্রাণী, যেমন সমুদ্রপাখিরা, পাথরের মাঝে ডিম পাড়ে, যা সহজে দেখা যায় না। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হওয়ার পর, তাদের শরীরেও থাকে ছোপ ছোপ দাগ, যা তাদের আশেপাশের পরিবেশের সঙ্গে মিশে যেতে সাহায্য করে।
আবার কিছু প্রাণী জন্মের পরেই দৌড়াতে শুরু করে। জেব্রা এবং ওয়াইল্ডবিস্ট (wildebeest) -এর বাচ্চারা জন্মের কিছুক্ষণের মধ্যেই হাঁটতে পারে। মায়ের কাছ থেকে তারা খাবার সংগ্রহ করা এবং বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার কৌশল শেখে।
কিছু প্রাণী, যেমন ঝিনুক, তাদের বংশ বিস্তারের জন্য এক দারুণ কৌশল অবলম্বন করে। তারা মাছকে আকৃষ্ট করে এবং তাদের শরীরে নিজেদের বাচ্চাগুলোকে বহন করতে দেয়। এর ফলে ঝিনুকের বাচ্চারা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারে।
মানুষসহ অনেক স্তন্যপায়ী শিশুরাই তাদের বাবা-মায়ের কাছ থেকে দীর্ঘ সময় ধরে যত্ন পায়। বাঘের বাচ্চারা মায়ের কাছ থেকে দুধ পান করে এবং ধীরে ধীরে কঠিন খাবার খেতে শেখে। শিম্পাঞ্জি, বাদুড়, হাতি এবং গরিলা – এদের বাচ্চারাও তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গেই অনেক বছর কাটায়।
এই কৌশলগুলো হয়তো খুব সাধারণ, কিন্তু এগুলো লক্ষ লক্ষ বছর ধরে বিবর্তনের মাধ্যমে টিকে আছে। যারা ভালোভাবে বাঁচতে পারে, তারাই এই পৃথিবীতে নিজেদের স্থান ধরে রাখে।
আফ্রিকার সাভানা অঞ্চলের হাতির একটি ছবি তোলার অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে জোয়েল জানান, সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে একটি হাতির বাচ্চার ছবি তোলার জন্য তাকে অনেক অপেক্ষা করতে হয়েছিল। এই ছবিগুলো শিশুদের জীবনের সংগ্রামের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক