ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর খারকিভে রাশিয়ার ড্রোন হামলায় নিহত ২, আহত বহু।
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর খারকিভে গত রবিবার রাশিয়ার চালানো ড্রোন হামলায় অন্তত দুইজন নিহত হয়েছে এবং বহু মানুষ আহত হয়েছে। খারকিভের মেয়র ইগর তেরেকভ টেলিগ্রামে দেওয়া এক বার্তায় জানান, আবাসিক এলাকা, হাসপাতাল এবং শহরের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর ওপর রাশিয়া সাতটি ‘শাহীদ’ ড্রোন দিয়ে আঘাত হেনেছে।
ইরানের তৈরি এই ড্রোনগুলো ব্যবহার করা হয়েছে।
মেয়র আরও জানান, ড্রোন হামলায় একটি সামরিক হাসপাতাল, একটি শপিং সেন্টার এবং আবাসিক ভবনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হামলায় আহত ৩৫ জনের মধ্যে পাঁচজন শিশু।
এদের মধ্যে ১৩ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, যাদের মধ্যে একজন কিশোরীর অবস্থা গুরুতর।
এই হামলার বিষয়ে কিয়েভ থেকে আল-জাজিরার প্রতিবেদক জেইন বাসরাভি বলেন, ‘গত কয়েক মাসে খারকিভ শহর এই যুদ্ধের ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করেছে। গতকালকের ঘটনা সত্যিই খুবই সহিংস ছিল।’
ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, হামলার সময় ঐ সামরিক হাসপাতালে সেনারা চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনেছে এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইনেরNorms লঙ্ঘনেরও অভিযোগ তুলেছে।
তারা এটিকে ইচ্ছাকৃতভাবে সামরিক স্থাপনার ওপর হামলা হিসেবে বর্ণনা করেছে।
হামলার সময় প্রাণে বেঁচে যাওয়া একজন, যিনি নিজেকে আন্তন নামে পরিচয় দিয়েছেন, জানান ড্রোন হামলার সময় তিনি তার অ্যাপার্টমেন্টের পাশের একটি কক্ষে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আমি যেন জীবনের কাছে বিদায় জানাচ্ছিলাম।’ ২২ বছর বয়সী আন্তনের মাথা ও বাঁ হাতে ব্যান্ডেজ বাঁধা ছিল।
রবিবার ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, রাশিয়া ১১১টি ড্রোন এবং একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।
এতে সুমি, ওদেসা এবং দোনেৎস্ক অঞ্চলেও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তাদের দাবি, তারা ৬৫টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে এবং আরও ৩৫টিকে অকার্যকর করে দিয়েছে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের দৈনিক বুলেটিনে জানিয়েছে, তাদের বাহিনী ইউক্রেনের ১৪০টি জেলায় আঘাত হেনেছে, যার মধ্যে সামরিক বিমানঘাঁটি এবং গোলাবারুদের গুদামও রয়েছে।
তবে তারা হাসপাতালের কথা উল্লেখ করেনি।
এই হামলার ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটল, যখন ইউক্রেন পশ্চিমা মিত্রদের কাছ থেকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে তাদের আগ্রাসন বন্ধ করার জন্য জোরালো সমর্থন চাইছে।
উভয় পক্ষই সম্প্রতি একটি মার্কিন-সমর্থিত যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের জন্য একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। রাশিয়া নিয়মিতভাবে ইউক্রেনের ওপর ড্রোন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রবিবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য মিত্রদের কাছ থেকে তারা এই হামলার জবাব আশা করছেন।
তিনি আরও যোগ করেন, গত এক সপ্তাহে মস্কো এক হাজারের বেশি ড্রোন ছুড়েছে। জেলেনস্কি সতর্ক করে বলেন, রাশিয়া উত্তর-পূর্ব ইউক্রেনে বসন্তকালে একটি বড় ধরনের আক্রমণের পরিকল্পনা করছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার একটি প্রচেষ্টা চলছে, যিনি রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়তে চেয়েছেন।
কিয়েভ এবং ইউরোপে এই নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে যে ইউক্রেনকে হয়তো মস্কোর কাছে আরও বেশি ছাড় দিতে হতে পারে।
গত সপ্তাহে প্যারিসে অনুষ্ঠিত এক শীর্ষ সম্মেলনে ইউরোপীয় নেতারা কিয়েভের সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ফ্রান্স এবং ব্রিটেন রাশিয়ান বাহিনীর সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির ক্ষেত্রে একটি বিদেশি ‘নিরাপত্তা বাহিনী’র প্রতি সমর্থন বাড়ানোর চেষ্টা করছে।
খারকিভে হামলার পর ফ্রান্সের পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী জ্যাঁ-নোয়েল বারোত এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, রাশিয়া যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে, যেখানে ইউক্রেন তা মেনে চলছে।
তিনি আরও বলেন, ‘ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি মেনে নিয়েছে। কিন্তু রাশিয়া খারকিভে গতকালও যুদ্ধাপরাধ চালিয়েছে। এখনও কে বিশ্বাস করবে যে [রুশ প্রেসিডেন্ট] ভ্লাদিমির পুতিন শান্তি চান?’
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা