ইউক্রেন যুদ্ধ: রাশিয়ার তেল কেনায় ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার হুমকিতে চীন ও ভারত।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি রাশিয়া থেকে তেল কেনা দেশগুলোর উপর ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেন, তবে তার সরাসরি প্রভাব চীন ও ভারতের উপর পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সম্প্রতি এনবিসি নিউজের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প জানান, তিনি এক মাসের মধ্যে এমন পদক্ষেপ নিতে পারেন, যদি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে কোনো সমঝোতা না হয় এবং তিনি মনে করেন এর জন্য রাশিয়া দায়ী।
বর্তমানে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। কিন্তু চীন ও ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশ সেই নিষেধাজ্ঞায় সরাসরি অংশ নিচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যদি এই দেশগুলোর উপরও আলাদা করে নিষেধাজ্ঞা বা শুল্ক আরোপ করা হয়, তাহলে রাশিয়ার তেল বিক্রির পথ সংকুচিত হয়ে আসবে এবং তাদের যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার খরচ জোগানো কঠিন হয়ে পড়বে।
যদিও চীন রাশিয়ার উপর সরাসরি আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের পক্ষে নেই, তবে তারা এই নিষেধাজ্ঞা ভাঙার বিষয়ে সতর্ক রয়েছে। কারণ নিষেধাজ্ঞা ভাঙলে তারাও যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার শিকার হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, অনেক চীনা ব্যাংক রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা সীমিত করেছে, যাতে তারা আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে বাদ না পরে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্প যদি ভেনেজুয়েলার তেলের ক্ষেত্রে যেমনটা করেছিলেন, তেমনভাবে ক্রেতাদের লক্ষ্য করে নিষেধাজ্ঞা দেন, তাহলে চীন ও ভারত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সুইস ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান ইউবিএস-এর বিশ্লেষক জিওভানি স্তাউনোভো বলেন, “আসন্ন দিনগুলোতে কি ঘোষণা করা হয়, সেদিকে আমাদের নজর রাখতে হবে।
বর্তমানে ভারত রাশিয়া থেকে সমুদ্রপথে সবচেয়ে বেশি অপরিশোধিত তেল আমদানি করছে। এই বছর ভারতের মোট অপরিশোধিত তেল আমদানির প্রায় ৩৫ শতাংশই এসেছে রাশিয়া থেকে। যুদ্ধের শুরু থেকেই এমন আশঙ্কা ছিল যে ভারত রাশিয়ার তেলের রপ্তানির ‘ব্যাক ডোর’ হিসেবে কাজ করতে পারে।
এদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বিরল খনিজ পদার্থ সংক্রান্ত একটি চুক্তি থেকে সরে আসার চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ করেছেন ট্রাম্প। তিনি দাবি করেন, জেলেনস্কি যদি এমনটা করেন তবে তার জন্য বড় ধরনের সমস্যা অপেক্ষা করছে।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ইউক্রেনের সামরিক সহায়তার বিনিময়ে দেশটির খনিজ সম্পদ থেকে অর্জিত রাজস্বের একটা অংশ এবং সুদ বাবদ অর্থ কয়েক বছর ধরে তাদের দিতে হবে। জেলেনস্কি যদিও এই চুক্তিতে রাজি হতে প্রস্তুত ছিলেন, তবে শর্তের বিষয়ে তিনি সতর্ক ছিলেন।
অন্যদিকে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের সেনারা ইউক্রেনের দোনেৎস্ক অঞ্চলের জাপোরিঝিয়া বসতিটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। যদিও বসতিটি জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছাকাছি নয়। সম্প্রতি ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা রাশিয়ার ছোড়া ১১১টি ড্রোন-এর মধ্যে ৬৫টি ভূপাতিত করেছে।
এছাড়াও, আরও ৩৫টি ড্রোনকে ‘নিষ্ক্রিয়’ করা হয়েছে, যা সম্ভবত ইলেক্ট্রনিক জ্যামিংয়ের মাধ্যমে করা হয়েছে। তবে খারকিভ, সুমি, ওডেসা এবং দোনেৎস্ক অঞ্চলে ড্রোন হামলার খবর পাওয়া গেছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান