বৈশ্বিক বাজারে আবারও দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য শুল্ক আরোপের ঘোষণার খবরে বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়েছে। বিনিয়োগকারীরা এখন নতুন করে শঙ্কিত, যার প্রভাব পড়েছে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিতে।
সোমবার, ট্রাম্পের একটি মন্তব্যের পর এই দরপতন শুরু হয়। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, এই সপ্তাহে তিনি যে শুল্ক ঘোষণা করতে যাচ্ছেন, তা কেবল নির্দিষ্ট কিছু দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং ‘সব দেশের’ ওপরই প্রযোজ্য হতে পারে। এর ফলে, বিনিয়োগকারীরা দ্রুত তাদের বিনিয়োগ সরিয়ে নিতে শুরু করেন, যার ফলস্বরূপ এশীয় এবং ইউরোপীয় শেয়ার বাজারগুলোতে বড় ধরনের পতন দেখা যায়।
জাপানের নিক্কেই সূচক সোমবার ৪ শতাংশ কমে যায়, আর দক্ষিণ কোরিয়ার কোস্পি সূচক কমেছে ৩ শতাংশ। ইউরোপের বাজারেও এর প্রভাব পড়ে। যুক্তরাজ্যের এফটিএসই ১০০ সূচক ০.৯ শতাংশ এবং জার্মানির ড্যাক্স ও ফ্রান্সের সিএসি সূচক ১ শতাংশের বেশি কমে যায়। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বিনিয়োগকারীরা এখন নিরাপদ বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকছেন।
এর ফলস্বরূপ, সোনার দাম নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে, প্রতি আউন্স ৩,১২৮ ডলারে (প্রায় ৩,৪৫,০০০ টাকা)।
অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন, নতুন শুল্ক আরোপের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে, কারণ ব্যবসায়ীরা এই খরচ ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দেবে। সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, আমেরিকার ভোক্তাদের মধ্যে অর্থনৈতিক আস্থা কমে গেছে, যা শেয়ার বাজারে আরও খারাপ প্রভাব ফেলেছে।
গোল্ডম্যান স্যাকস তাদের পূর্বাভাসে আগামী ১২ মাসের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মন্দা আসার সম্ভাবনা ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ শতাংশ করেছে। তারা সতর্ক করে বলেছে, এর ফলে ওয়াল স্ট্রিটে আরও ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। সুইস ব্যাংক ইউবিএসও মার্কিন শেয়ার বাজারের এসএন্ডপি ৫০০ সূচকের পূর্বাভাস কমিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাণিজ্য যুদ্ধের এই আশঙ্কা মার্চ মাসজুড়ে বাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এই মাসে, এমএসসিআই-এর তৈরি করা বৈশ্বিক শেয়ার সূচক ৪.৫ শতাংশ কমেছে, যা সেপ্টেম্বর ২০২২ থেকে সবচেয়ে খারাপ পারফরম্যান্স। ডলারের অবস্থাও বেশ খারাপ, মার্চ মাসে অন্যান্য মুদ্রার বিপরীতে এটি প্রায় ৩.৫ শতাংশ কমেছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন শুল্কের কারণে মার্কিন গাড়ি প্রস্তুতকারকদের দাম বাড়ানো নিয়ে কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করেননি। বিশ্লেষকদের মতে, বিনিয়োগকারীরা এখন বাণিজ্য যুদ্ধের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব নিয়ে চিন্তিত, যা বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি কমিয়ে দিতে পারে এবং বিনিয়োগের সুযোগও হ্রাস করতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর প্রভাব পড়তে পারে। বিশ্ববাজারে অস্থিরতার কারণে পোশাক শিল্পসহ বিভিন্ন খাতে শুল্কের প্রভাব পড়তে পারে, যা রপ্তানি এবং সামগ্রিক অর্থনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান