যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, কারণ সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউরোপ থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্যও উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে এবং তারা চেষ্টা করছে কিভাবে এই শুল্কের প্রভাব থেকে নিজেদের বাঁচানো যায়।
ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছেন যে, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের অনেক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘অন্যায্য বাণিজ্য’ করছে। তিনি মনে করেন, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই তিনি এই শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছেন, যা সম্ভবত ‘মুক্তি দিবস’ হিসেবে ২ এপ্রিল থেকে কার্যকর হতে পারে।
তার উপদেষ্টারা প্রায় সব ধরনের পণ্যের উপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব তৈরি করেছেন। তবে ইইউ এবং যুক্তরাজ্যের নেতারা এরই মধ্যে এই ধরনের পদক্ষেপের সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন।
যুক্তরাজ্যের জন্য পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। ট্রাম্পের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক ভালো থাকার কারণে তারা এই শুল্কের আওতা থেকে নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে। ব্রিটিশ বাণিজ্য সচিব জোনাথন রেইনল্ডস জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্য যদি কোনোভাবে ছাড় পেতে পারে, তবে সেটি হবে তাদের জন্য বড় সুযোগ।
ব্রিটিশ লেবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টারমার বলেছেন, ব্যবসায়ীরা প্রতিশোধমূলক বাণিজ্য যুদ্ধ চান না। তিনি পরিস্থিতি ‘শান্ত ও সুচিন্তিত’ভাবে মোকাবেলা করতে চান।
এই পরিস্থিতিতে, ইইউ পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্য, যেমন – ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম, টেক্সটাইল, চামড়ার সামগ্রী, গৃহস্থালীর সরঞ্জাম এবং কাঠের উপর শুল্ক আরোপ করতে পারে। এমনকি, তারা বড় প্রযুক্তি কোম্পানি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর ইইউতে অর্জিত আয়ের ওপরও শুল্ক আরোপের কথা বিবেচনা করছে।
বাণিজ্য বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করা এখনই ফলপ্রসূ হবে না। কারণ, ইইউর ২৭টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে একটি সাধারণ কৌশল তৈরি করা কঠিন।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতির একটি বড় অংশ আসে চীন থেকে। এরপরই রয়েছে ইইউ। জার্মানি, আয়ারল্যান্ড এবং ইতালির মতো কয়েকটি দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত রয়েছে। জার্মানি একাই গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১৪৪ বিলিয়ন ইউরোর পণ্য বিক্রি করেছে, যেখানে তাদের গাড়ির বিক্রি ছিল ২২ বিলিয়ন ইউরোর বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এই শুল্কের প্রভাব ইতোমধ্যে পড়তে শুরু করেছে। শেয়ার বাজারে মন্দা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে, ইইউ নিজেদের একটি নিরাপদ বিনিয়োগের স্থান হিসেবে তুলে ধরছে।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হলো, বিশ্ব বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে আন্তর্জাতিক সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যাঘাত ঘটতে পারে, যা দেশের আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যকে প্রভাবিত করবে। এছাড়া, বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে। তাই, বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এই ধরনের বৈশ্বিক অস্থিরতা থেকে রক্ষা করতে প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।
সরকার ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান