গাজায় হামাস মিলিট্যান্টদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে এক ফিলিস্তিনি যুবকের মৃত্যু হয়েছে। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, নিহত ২২ বছর বয়সী ওই যুবক হামাসের কঠোর সমালোচনা করেছিলেন এবং তাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন।
উদায় রাবি নামের ওই যুবককে গত সপ্তাহে গাজা শহরের তাল আল-হাওয়া এলাকা থেকে অপহরণ করে হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসাম ব্রিগেডের সশস্ত্র সদস্যরা। তাঁর ভাই হাসান রাবি মঙ্গলবার সিএনএনকে জানান, ঘটনার কয়েকদিন আগে উদয় হামাস বিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন।
হাসান আরও জানান, তাঁর ভাই উদয়ের সঙ্গে হামাসের সদস্যদের কয়েক সপ্তাহ আগে বাগবিতণ্ডা হয়েছিল। এরপর থেকেই তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে, সশস্ত্র সদস্যরা তাঁকে আক্রমণ করতে পারে। বিক্ষোভের সময় উদয়কে ‘নো টু হামাস’ স্লোগান দিতেও শোনা গিয়েছিল।
পরিবারের অভিযোগ, গত শুক্রবার আল-কাসাম ব্রিগেডের সদস্যরা উদয়কে অপহরণ করে এবং তাঁর উপর অকথ্য নির্যাতন চালায়। নির্যাতনের পর গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে রাস্তায় ফেলে রেখে যায় তারা।
হাসান সিএনএনকে বলেন, “তারা (হামাসের সদস্যরা) তাঁকে ধরে নিয়ে যায় এবং নির্যাতন করতে থাকে। এরপর তারা আমাকে ফোন করে জানায়, তোমার ভাইকে নিয়ে যাও। যখন তারা আমার হাতে তুলে দেয়, তখনো সে জীবিত ছিল।”
হাসান আরও যোগ করেন, “তারা উদয়কে একটি রশি দিয়ে বেঁধে টেনে নিয়ে আসছিল এবং মারধর করছিল। তারা আমাকে বলে, যারা আল-কাসাম ব্রিগেডকে অসম্মান করে এবং তাদের বিরুদ্ধে কথা বলে, তাদের পরিণতি এমনই হবে।”
হাসান তাঁর আহত ভাইকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা যায়, উদয়ের শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন। তাঁর হাত, পিঠ ও পায়ে গভীর ক্ষত ছিল। হাসান ছবিগুলোর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
হাসপাতal-এ নেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই উদয়ের মৃত্যু হয়। পরিবারের দেওয়া ছবিতে দেখা যায়, তাঁর মুখ গুরুতরভাবে ক্ষতবিক্ষত, মাথার কিছু চুল ও একটি ভ্রু শেভ করা ছিল।
হাসান জানান, তাঁদের পরিবার নিশ্চিত যে আল-কাসাম ব্রিগেডের সদস্যরাই উদয়কে হত্যা করেছে এবং তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের নামও তাঁরা জানেন।
এদিকে, হামাসের মিডিয়া অফিস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ফিলিস্তিনিদের মতামত প্রকাশের এবং শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার অধিকার রয়েছে। তবে আল-কাসাম ব্রিগেড এখনো এই অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
উদয় রাবির পরিবার ফেসবুকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে জানিয়েছে, শুক্রবার রাত সাড়ে আটটায় ‘আল-কাসাম ব্রিগেডের সদস্য’ পরিচয় দিয়ে একটি দল উদয়কে অপহরণ করে। পরিবারের সদস্যরা তাঁকে অনেক খোঁজাখুঁজির পর জানতে পারেন, তাঁকে ‘শাস্তি’ দেওয়ার জন্য আটক করা হয়েছে, কারণ তিনি নাকি তাদের ‘গালিগালাজ’ করেছিলেন। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, উদয়কে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। তাঁর শরীরে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয় এবং মাথা, কোমর ও পিঠে গুরুতর আঘাত লাগে।
পরিবার এই ঘটনার বিচার দাবি করেছে এবং হামাসের প্রতি দোষীদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে।
ঘটনার এক সপ্তাহ আগে তোলা একটি ভিডিওতে উদয়কে বলতে শোনা যায়, “তারা (হামাস) আমাকে নিতে চায়, আমাকে মারতে চায়…আমি জানি না তারা আমার কাছ থেকে কী চায়।”
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল আক্রমণের পর ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে গাজায় ৫০,০০০ এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এর মধ্যেই গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে।
ফিলিস্তিনের মানবাধিকার বিষয়ক স্বাধীন কমিশন এক বিবৃতিতে উদয় রাবির হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে। তারা এই ঘটনাকে ‘নিরাপত্তাহীনতা, অস্ত্রের বিস্তার এবং গাজায় আইনের শাসনের অনুপস্থিতি’ হিসেবে উল্লেখ করেছে, যা জনগণের অধিকার ও স্বাধীনতার জন্য গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন