যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন: একদিকে যেমন চলছে ধ্বংসলীলা, তেমনই বাড়ছে কূটনৈতিক তৎপরতা।

ইউক্রেন যুদ্ধের ডামাডোলের মধ্যে, রাশিয়ার একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার সঙ্গে মার্কিন কর্মকর্তাদের বৈঠক নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। বুধবার ওয়াশিংটনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিনিয়োগ বিষয়ক দূত কিরিল দিমিত্রিয়েভ-এর সঙ্গে মার্কিন কর্মকর্তাদের আলোচনা হয়। যদিও দিমিত্রিয়েভের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে, তবে বৈঠকের জন্য তা শিথিল করা হয়েছিল। উল্লেখ্য, ২০২২ সালে যুদ্ধ শুরুর পর এই প্রথম কোনো উচ্চপদস্থ রুশ কর্মকর্তা সরকারি সফরে আমেরিকায় গেলেন।

বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে জানা যায়, ২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের অভিযোগের সঙ্গে দিমিত্রিয়েভের নাম জড়িয়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে এই বৈঠক নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠছে।

অন্যদিকে, ট্রাম্প প্রশাসনের তরফে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোনো বাণিজ্য শুল্ক আরোপ করা হয়নি। বরং ইউক্রেনের উপর ১০ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়েছে। খবর অনুযায়ী, খুব সম্ভবত আগামী সপ্তাহেই ইউক্রেনের একটি প্রতিনিধি দল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসতে পারে।

যুদ্ধ পরিস্থিতি: একদিকে যেমন কূটনৈতিক আলোচনা চলছে, তেমনই ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বুধবার কিয়েভের পূর্বাঞ্চলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির শহর ক্রিভি রিগে অন্তত চারজন নিহত এবং ১৪ জন আহত হয়েছেন। এছাড়াও, জাপোরিঝিয়ায় একটি আবাসিক এলাকার বাইরে গাড়ির ওপর হামলায় একজন নিহত হয়েছেন। খারকিভে ১৭টি ড্রোন হামলা চালানো হয়, যাতে পাঁচজন আহত হয়েছেন। ডেরহাচি শহরেও ড্রোন হামলায় একজন আহত হয়েছেন।

ন্যাটো জোটের সামরিক সহায়তা:

যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে ন্যাটো। জোটের মহাসচিব মার্ক রুটে জানিয়েছেন, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ইউক্রেনকে ২০ বিলিয়ন ইউরোর বেশি সামরিক সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। আগামী দু’দিনের মধ্যে ব্রাসেলসে ন্যাটো সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে, যেখানে ইউক্রেনকে আরও কীভাবে সাহায্য করা যায়, সেই বিষয়ে আলোচনা হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য বজায় রাখলে অন্যান্য দেশগুলোর উপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে। এক্ষেত্রে, যেসব দেশ রাশিয়া থেকে জ্বালানি ও ইউরেনিয়াম কিনবে, তাদের উপর ৫০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।

ইউক্রেনের দুর্নীতি:

যুদ্ধের মধ্যে দুর্নীতি দমনেও তৎপর হয়েছে ইউক্রেন সরকার। বুধবার দেশটির কর্তৃপক্ষ সৈন্যদের জন্য খাদ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মূল্য নির্ধারণ এবং অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে পাঁচজনকে অভিযুক্ত করেছে। এদের মধ্যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক একজন কর্মকর্তাও রয়েছেন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, অর্থ পাচার এবং দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, আত্মসাৎ করা অর্থ বিদেশে সম্পত্তি কিনতে ব্যবহার করা হয়েছে, যার মধ্যে ক্রোয়েশিয়ার কিছু হোটেলও রয়েছে।

পোল্যান্ডে সাইবার হামলা:

ইউক্রেনকে সহায়তার কারণে পোল্যান্ডও রাশিয়ার নিশানায় পরিণত হয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক জানিয়েছেন, তার দলের তথ্যপ্রযুক্তি সিস্টেমে সাইবার হামলা হয়েছে। আগামী মে মাসে পোল্যান্ডে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে এই ধরনের ঘটনাকে দেশটির নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের জন্য উদ্বেগের কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান