যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়: একজনের মৃত্যু, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে আঘাত হেনেছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়। এতে অন্তত একজনের মৃত্যু হয়েছে এবং বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বুধবার (২ এপ্রিল, ২০২৪) দিনের বেলায় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে সেখানকার আবহাওয়া বেশ অস্থির হয়ে ওঠে, যার ফলস্বরূপ টর্নেডোসহ তীব্র ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়।
খবর অনুযায়ী, আরকানসাস, ইলিনয়, ইন্ডিয়ানা, মিসৌরি এবং মিসিসিপিসহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে এই দুর্যোগ আঘাত হানে।
ঝড়ের কারণে বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গেছে, গাছপালা ভেঙে পড়েছে এবং ঘরবাড়ির ছাদ উড়ে গেছে। মিসৌরির পূর্বাঞ্চলে ঝড়ের আঘাতে ঘরবাড়ি, গাড়ি ও বিদ্যুতের খুঁটির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ইন্ডিয়ানাপোলিসের একটি গুদামের একাংশ ধসে পড়ায় সেখানে একজন আটকা পড়েন। এছাড়া, আরকানসাসে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়, কারণ সেখানে একটি শক্তিশালী টর্নেডোর কারণে ধ্বংসাবশেষ অনেক উপরে উড়ে যায়।
আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, আগামী দিনগুলোতে এই অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে, যা জীবনহানির কারণ হতে পারে। বিশেষ করে, টেক্সাস থেকে শুরু করে মিনেসোটা এবং মেইন পর্যন্ত বিস্তৃত বিশাল অঞ্চলে প্রায় ৯ কোটি মানুষের উপর এর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন যে, এই বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যা দেখা দিতে পারে এবং এতে রাস্তাঘাট তলিয়ে যেতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস জানিয়েছে, আগামী কয়েকদিনে এক ফুটের বেশি বৃষ্টি হতে পারে, যা সম্ভবত এক প্রজন্মের মধ্যে দেখা যায় এমন একটি ঘটনা। এর ফলে ঐতিহাসিক বৃষ্টিপাতের রেকর্ড তৈরি হতে পারে।
আরকানসাসের ব্লাইদভিল এলাকার কাছাকাছি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছিল, যেখানে টর্নেডোর কারণে ধ্বংসাবশেষ ৭.৬ কিলোমিটার পর্যন্ত উপরে উঠে যায়।
আর্কানসাসের জরুরি ব্যবস্থাপনা বিভাগ জানিয়েছে, টর্নেডো, দমকা হাওয়া, শিলাবৃষ্টি এবং আকস্মিক বন্যায় ২২টি কাউন্টিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, অন্তত চারজন আহত হয়েছেন।
এছাড়া, কেনটাকিতে একটি গির্জার উপর টর্নেডো আঘাত হানলে চারজন আহত হন, তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর। ইন্ডিয়ানার ব্রাউনসবার্গে একটি গুদামঘরের অংশ ভেঙে পড়েছে এবং লোয়েলের কাছে আই-৬৫ মহাসড়কে পাঁচটি সেমি-ট্রাক উল্টে যায়।
মিসৌরির পাইলট গ্রোভে বেশ কয়েকটি স্থাপনার ক্ষতি হয়েছে এবং কিছু গাড়ি উল্টে গেছে।
ওকলাহোমার ওসোতে একটি টর্নেডো আঘাত হানে, যার ফলে ঘরবাড়ির ছাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বিদ্যুতের খুঁটি ও গাছপালা ভেঙে পড়েছে। এই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে আরকানসাস, মিসিসিপি, মিসৌরি, ইলিনয়, কেনটাকি ও টেনেসির প্রায় ৯০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে শক্তিশালী টর্নেডোর সম্ভবনা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পশ্চিম টেনেসির কিছু অংশ, উত্তর-পূর্ব আরকানসাস, দক্ষিণ-পূর্ব মিসৌরি এবং পশ্চিম কেনটাকি ও দক্ষিণ ইলিনয়ের কিছু অংশ।
যুক্তরাষ্ট্রের এই দুর্যোগের ঘটনা বাংলাদেশের জন্য একটি সতর্কবার্তা। কারণ, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের দেশেও ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি বাড়ছে।
তাই, দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি আরও জোরদার করতে হবে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস।