মায়ানমারে ভূমিকম্পের পাঁচ দিন পর ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে দুই ব্যক্তিকে। এই ঘটনায় আশা জেগেছে, তবে মৃতের সংখ্যা তিন হাজারের বেশি হওয়ায় শোক এখনো কাটেনি।
দেশটির সামরিক সরকার উদ্ধার কাজের সুবিধার্থে সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সাময়িক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে।
ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ম্যান্ডালয় শহরে উদ্ধারকর্মীরা এক বৃদ্ধকে একটি ধসে পড়া হোটেল থেকে বের করে আনে। বুধবার, ভূমিকম্পের ১২৫ ঘণ্টা পর, ৫৩ বছর বয়সী ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়।
চীনের একটি উদ্ধারকারী দলের সঙ্গে মিয়ানমারের দমকলকর্মীরাও এই কাজে সহায়তা করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসা ভিডিওতে দেখা যায় উদ্ধারকর্মীরা স্ট্রেচারে করে ওই ব্যক্তিকে নিয়ে যাওয়ার সময় হাততালি দিচ্ছিলেন।
অন্যদিকে, সাগাইং শহরেও ৪০ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয় একটি হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন আছেন এবং সুস্থ আছেন বলে জানা গেছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা সিএনএন-এর পাওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, উদ্ধারকারীরা বিশেষ ক্যামেরা ব্যবহার করে ওই ব্যক্তির অবস্থান শনাক্ত করেন।
সামরিক জান্তা জানিয়েছে, ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা তিন হাজার ছাড়িয়েছে এবং আহত হয়েছেন আরও অনেকে। তবে এখনো বহু মানুষ নিখোঁজ থাকায় প্রকৃত মৃতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়াদের জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসছে।
দুর্যোগকবলিত এলাকাগুলোতে জরুরি ত্রাণ সরবরাহের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিচ্ছেন আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলো। জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে, হাসপাতালগুলোতে আহতদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য অস্থায়ী তাঁবু তৈরি করা হয়েছে। সেখানে ভেঙে যাওয়া হাড়, ক্ষত এবং মানসিক আঘাত পাওয়া রোগীদের চিকিৎসা চলছে।
ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্সের (MSF) তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পে প্রায় ৫০০টি ভবন সম্পূর্ণভাবে এবং আরও ৮০০টি ভবন আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা উদ্ধারকর্মীদের কাজকে আরও কঠিন করে তুলেছে।
এদিকে, প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ডেও ভূমিকম্পের কম্পন অনুভূত হয়েছে। সেখানে একটি নির্মাণাধীন বহুতল ভবন ধসে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে কমপক্ষে ১৫ জন নিহত হয়েছেন এবং অনেকে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ব্যাংককের গভর্নর জানিয়েছেন, ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে কারও কণ্ঠস্বর শোনা গেছে, যা আটকে পড়াদের পরিবারের জন্য কিছুটা হলেও আশার আলো দেখাচ্ছে।
উল্লেখ্য, মায়ানমারের এই ভূমিকম্প বাংলাদেশের কাছাকাছি হওয়ায় এখানকার মানুষের মধ্যে এর প্রভাব অনেক বেশি। প্রাকৃতিক দুর্যোগের এমন পরিস্থিতিতে উদ্ধারকাজ এবং ত্রাণ বিতরণে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্য সূত্র: সিএনএন