পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে সমকামিতা-সংক্রান্ত আইন নিয়ে আইনি লড়াই এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। দেশটির সুপ্রিম কোর্টের একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সেখানকার এলজিবিটিকিউ+ অধিকার কর্মী জেসন জোন্স আপিল করেছেন যুক্তরাজ্যের প্রিভি কাউন্সিলে, যা এই দ্বীপরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আপিল আদালত হিসেবে বিবেচিত।
২০১৮ সালে ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে সমকামিতাকে অপরাধমূলক ঘোষণা করা একটি আইন বাতিল করা হয়েছিল, যা ব্রিটিশ শাসনের সময় ১৯২৫ সালে প্রণীত হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট সেই রায়কে বাতিল করে পুরোনো আইন বহাল রেখেছে। এর ফলে ক্যারিবীয় অঞ্চলের এই দেশটিতে এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের অধিকার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জেসন জোন্স এই মামলার মূল বিষয় হিসেবে দেশটির সংবিধানে থাকা একটি ‘সংরক্ষণ ধারা’র (Savings Clause) ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। এই ধারাটি পুরনো আইন বহাল রাখার সুযোগ দেয়। জোন্সের যুক্তি হলো, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে এই ধারা তৈরি করা হলেও, এখন এটি গণতন্ত্রের পরিপন্থী হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো ১৯৭৬, ১৯৮৬ এবং ২০০০ সালে তাদের যৌন অপরাধ সংক্রান্ত আইনে পরিবর্তন এনেছে। তাই, পুরনো এই ‘সংরক্ষণ ধারা’র অধীনে থাকা আইনের আর কোনো কার্যকারিতা নেই।
অন্যদিকে, আদালতের এই সিদ্ধান্তের পর ত্রিনিদাদের এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের মধ্যে হতাশা ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের অনেকেই মনে করছেন, এই রায়ের ফলে তাদের অধিকার দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং সমাজে তাদের অবস্থান আরও কঠিন হবে।
ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে যদিও একটি উৎসবমুখর সংস্কৃতি বিদ্যমান, যেখানে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশা ও যৌন অভিমুখের মানুষের অবাধ বিচরণ দেখা যায়, সেখানে ধর্মীয় গোঁড়ামি এবং রক্ষণশীল মানসিকতা এখনো প্রবল। এর ফলে, সমকামীদের অধিকারের বিষয়টি বেশ জটিল। রাজধানী পোর্ট অফ স্পেনের বাইরে অনেক সম্প্রদায়ে, গে হিসেবে পরিচিত হওয়াটা এখনো ঝুঁকিপূর্ণ।
জেসন জোন্সের এই আইনি লড়াই শুধু ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এর প্রভাব পড়তে পারে অন্যান্য কমনওয়েলথ দেশগুলোতেও। কারণ, ২০১৮ সালে জোন্সের মামলার কয়েক মাস পরেই ভারতেও সমকামিতাকে বৈধতা দেওয়া হয়েছিল। যদি প্রিভি কাউন্সিল ত্রিনিদাদ সরকারের পক্ষে রায় দেয়, তবে জোন্স এই বিচারব্যবস্থা থেকে সরে আসার কথা জানিয়েছেন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান