ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে তাদের প্রথম শীর্ষ সম্মেলন শুরু করতে যাচ্ছে। কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং উজবেকিস্তানের নেতাদের সঙ্গে এই সম্মেলনে মিলিত হবেন ইইউ নেতারা। খবরটি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্ট শাভকাত মিরজিইয়োয়েভের আয়োজনে অনুষ্ঠিতব্য এই সম্মেলনে বাণিজ্য, সন্ত্রাস দমন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং জ্বালানি সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। এই অঞ্চলে রাশিয়ার প্রভাব এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ইতোমধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর থেকে মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে চাইছে ইইউ। বিশেষ করে বাণিজ্য এবং জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই অঞ্চলের গুরুত্ব বেড়েছে। তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই সম্পর্ক স্থাপনে মানবাধিকারের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে।
তাদের মতে, অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার পাশাপাশি আইনের শাসন এবং মানবাধিকার সুরক্ষার বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে।
মধ্য এশিয়ার দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে কিনা, সেই বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এই অঞ্চলের দেশগুলো থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল সরবরাহ পাওয়ার বিষয়েও ইইউ আগ্রহী।
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ইস্করা কিরোভা বলেছেন, ইইউর উচিত হবে এই অঞ্চলে আইনের শাসন এবং মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া। তিনি কিরগিজস্তানের সঙ্গে ইইউর বাণিজ্য চুক্তির সমালোচনা করে বলেন, মানবাধিকারের শর্ত পূরণ না করেই এমন চুক্তি করা হলে তা টেকসই হবে না।
অন্যদিকে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মাইসি ওয়েইখার্ডিং বলেছেন, অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে মানবাধিকারের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এর মধ্যে পরিবেশ ও জলবায়ু প্রভাব মূল্যায়ন, স্থানীয় জনগণের সঙ্গে পরামর্শ এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি রোধের মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
উজবেকিস্তানে সম্প্রতি একটি গণভোটের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট মিরজিইয়োয়েভ ২০৪০ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার সুযোগ তৈরি করেছেন, যা মানবাধিকার সংগঠনগুলোর উদ্বেগের কারণ। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধি দলের ভাইস-চেয়ার, জানা টুম মনে করেন, রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞা এড়াতে মধ্য এশিয়ার দেশগুলো যথেষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
বিশ্লেষকদের মতে, ইইউকে অবশ্যই অর্থনৈতিক স্বার্থ এবং মানবাধিকারের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। এই অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা বাড়লে, পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে সময় লাগবে এবং রাশিয়া ও চীনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করা দেশগুলোর পরিস্থিতি বিবেচনায় রাখতে হবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান