নিউজিল্যান্ডের আদিবাসী মাওরি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে স্বাক্ষরিত ঐতিহাসিক একটি চুক্তি নতুন করে ব্যাখ্যার প্রস্তাব সম্বলিত একটি বিল বাতিল করার সুপারিশ করেছে দেশটির পার্লামেন্টারি কমিটি। এই বিলটি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, কারণ এতে মাওরি এবং ব্রিটিশ সরকারের মধ্যেকার সম্পর্ক নির্ধারণের মূলনীতিগুলো পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছিল।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে, নিউজিল্যান্ডের আদিবাসী মাওরি সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষার উদ্দেশ্যে ১৮৪০ সালে এই ‘ওয়াইতাঙ্গি চুক্তি’ স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির মূল উদ্দেশ্য ছিল মাওরিদের ভূমি এবং সংস্কৃতির সুরক্ষা দেওয়া।
কিন্তু সম্প্রতি, দেশটির ‘অ্যাক্ট পার্টি’ নামক একটি রাজনৈতিক দল এই চুক্তির কিছু ধারা নতুনভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য একটি বিল উত্থাপন করে, যা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। বিলটি আইনে পরিণত হলে মাওরি সম্প্রদায়ের অধিকার দুর্বল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়।
বিলটি উত্থাপনের পর, এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হন মাওরি সম্প্রদায়ের মানুষসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন, আইনজ্ঞ এবং শিক্ষাবিদেরা। এর ফলস্বরূপ, বিলটির বিরুদ্ধে তিন লক্ষেরও বেশি লিখিত আপত্তি জমা পড়ে, যা নজিরবিহীন। জনমত যাচাইয়ের জন্য গঠিত একটি সংসদীয় কমিটি বিলটি নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে শুনানি শেষে এর ভবিষ্যৎ নির্ধারণে আলোচনায় বসে।
কমিটির মূল্যায়নে দেখা যায়, বিলটি নিয়ে আসা প্রস্তাবগুলোর সঙ্গে চুক্তির মূলনীতির মিল নেই। এছাড়া, বিল প্রণয়নের প্রক্রিয়াতেও কিছু ত্রুটি ছিল। কমিটি মনে করে, বিলটি সামাজিক সংহতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই, কমিটি বিলটি বাতিল করার সুপারিশ করেছে।
যদিও অ্যাক্ট পার্টি এই বিলের পক্ষে তাদের যুক্তি তুলে ধরেছে, তবে তাদের জোটসঙ্গী দলগুলো জানিয়েছে যে তারা বিলটির বিপক্ষে ভোট দেবে। প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার ল্যাক্সন জানিয়েছেন, কমিটি এই বিল নিয়ে আসা বিভিন্ন পক্ষের মতামত শুনেছে এবং এখন এর সমাধানে পৌঁছানো জরুরি।
এই ঘটনার মাধ্যমে নিউজিল্যান্ডের সমাজে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার এবং তাদের ঐতিহাসিক চুক্তির গুরুত্ব নতুন করে সামনে এসেছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান