যুদ্ধবিরতির আলোচনাকে ক্রমশ বিলম্বিত করছে রাশিয়া, বাড়ছে ইউক্রেনে হামলা।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এখনো চলছে, এবং শান্তি ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে। রাশিয়া একদিকে যেমন যুদ্ধবিরতির শর্ত জুড়ে দিচ্ছে, তেমনি অন্যদিকে ইউক্রেনের বিভিন্ন স্থানে তাদের আক্রমণ তীব্রতর করছে।
রাশিয়ার এমন দ্বিচারিতা আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারির হুমকি দিয়েছেন।
সম্প্রতি রাশিয়ার একটি পারমাণবিক সাবমেরিন পরিদর্শনে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানান, ইউক্রেনে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা উচিত, যারা নির্বাচনের দিকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি-কে দুর্বল করতেই রাশিয়া এমনটা করছে।
ফেব্রুয়ারি মাস থেকে রাশিয়া ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরু করলেও, তাদের পক্ষ থেকে নানা অজুহাত দেখানো হচ্ছে।
রাশিয়ার পক্ষ থেকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তাদের দাবি, ইউক্রেনীয় বাহিনী জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা চালিয়েছে।
যদিও কিয়েভ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ সম্প্রতি বলেছেন, তিনি তার মার্কিন প্রতিপক্ষকে ইউক্রেনীয় বাহিনী কর্তৃক ক্ষতিগ্রস্ত জ্বালানি স্থাপনার একটি তালিকা দেবেন।
অন্যদিকে, ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ স্বীকার করেছেন যে, ইউক্রেন এখনো পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে রাজি হয়নি।
যুদ্ধবিরতি নিয়ে রাশিয়ার আরও কিছু আপত্তি রয়েছে।
রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন আলোচনায় “এই সংঘাতের মূল কারণগুলো” যেমন—ন্যাটোর পূর্ব দিকে বিস্তার এবং ইউক্রেনে বসবাসকারী রুশ সংখ্যালঘুদের প্রতি আচরণ—আলোচনার কোনো সুযোগ রাখা হয়নি।
রাশিয়া কোনো শান্তি রক্ষী বাহিনীকে ইউক্রেনে পাঠাতেও রাজি নয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুদ্ধ চুক্তির পর একটি শান্তি রক্ষী বাহিনী মোতায়েন করার প্রস্তাব দিয়েছে, তবে রাশিয়া এর ঘোর বিরোধী।
রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত রডিয়ন মিরোশনিক এক সম্মেলনে বলেছেন, ইউক্রেনে কোনো ইউরোপীয় বাহিনীর উপস্থিতি “ইউরোপের দ্বারা ইউক্রেনের সুস্পষ্ট দখলদারিত্ব”।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার এই অবস্থানের ওপর অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেছেন, রাশিয়ার তেলের ওপর ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হতে পারে এবং যারা এটি কিনবে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে, ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার আক্রমণ ক্রমাগত বাড়ছে।
ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, মার্চ মাসে ৪,২৭০টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে, যেখানে ফেব্রুয়ারিতে এই সংখ্যা ছিল ৩,২৭৪।
রাশিয়া তাদের সামরিক শক্তি প্রদর্শনের জন্য এখনো নিয়মিতভাবে ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন ব্যবহার করছে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রাশিয়ার ড্রোন হামলাও বেড়েছে।
গত ২৯শে মার্চ, রাশিয়া ইউক্রেনের ওপর ১৭২টি ড্রোন হামলা চালায়, যার মধ্যে ৯৪টি ভূপাতিত করা হয় এবং ৬৯টিকে ইলেক্ট্রনিক জ্যামিংয়ের মাধ্যমে অকার্যকর করা হয়।
ড্রোন হামলায় আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বেশ কয়েকজন হতাহত হয়েছে।
অন্যদিকে, ইউক্রেনীয় বাহিনী তাদের সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে।
দেশটির কমান্ডার-ইন-চিফ ওলেক্সান্ডার সিরস্কি জানিয়েছেন, সৈন্যদের প্রশিক্ষণ সময় বাড়িয়ে দেড় মাস করা হয়েছে।
এছাড়াও, নতুন যোদ্ধাদের জন্য একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করা হয়েছে, যার ফলস্বরূপ হতাহতের সংখ্যা কমেছে।
ইউক্রেনীয় সরকার ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণদের জন্য স্বেচ্ছাসেবী তালিকাভুক্তির ঘোষণা করেছে।
এছাড়া, বিভিন্ন ব্রিগেড স্বেচ্ছাসেবী গ্রহণ করা শুরু করেছে। মার্চ মাসে প্রায় ৮৮৪ জন স্বেচ্ছায় ইউক্রেনীয় বাহিনীতে যোগ দিয়েছেন।
যুদ্ধ পরিস্থিতিতে, ইউক্রেন নিজেদের অস্ত্র তৈরি করতে চাইছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা এ বছর এখন পর্যন্ত দেশীয়ভাবে উৎপাদিত নতুন প্রায় ৩৫০টি অস্ত্রের অনুমোদন দিয়েছে।
ইউরোপীয় দেশগুলোও ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা অব্যাহত রেখেছে।
জার্মানি ইউক্রেনকে ৩ বিলিয়ন ইউরোর সামরিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা