যুক্তরাষ্ট্রে লেখকদের কপিরাইট সংক্রান্ত মামলাগুলো একত্রিত করছে আদালত, যা প্রযুক্তি বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ওপেনএআই (OpenAI) এবং মাইক্রোসফটের (Microsoft) বিরুদ্ধে লেখকদের এই মামলাগুলোর মূল বিষয় হলো, তাদের তৈরি করা বৃহৎ ভাষার মডেল (Large Language Models – LLM) প্রশিক্ষণের জন্য অনুমতি ছাড়াই কপিরাইটযুক্ত কাজ ব্যবহার করা হয়েছে।
এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি হওয়া জেনারেটিভ এআই (Generative AI) প্রযুক্তি, যেমন ওপেনএআই-এর চ্যাটজিপিটি (ChatGPT) এবং মাইক্রোসফটের কোপাইলট (Copilot) নিয়ে উঠেছে বড় প্রশ্ন।
এই মামলাগুলোতে লেখক, শিল্পী এবং সংবাদ মাধ্যমগুলোর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে যে, তাদের কাজের স্বত্ব লঙ্ঘন করা হয়েছে। বিখ্যাত লেখক ও শিল্পী যেমন টা-নেহিসি কোটস, মাইকেল শ্যাবন, জুনট ডিয়াজ এবং সারাহ সিলভারম্যান-এর মতো ব্যক্তিত্ব এই মামলার সঙ্গে জড়িত।
নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর মতো সংবাদ সংস্থাগুলোও এই মামলায় তাদের অধিকার রক্ষার জন্য এগিয়ে এসেছে।
আদালতের একত্রীকরণের সিদ্ধান্তের কারণ হলো, মামলার বিচার প্রক্রিয়া সহজ করা এবং রায় প্রদানে সামঞ্জস্য আনা। যদিও অনেক বাদী এই একত্রীকরণের বিরোধিতা করেছিলেন, তাদের যুক্তি ছিল প্রতিটি মামলার ধরন আলাদা।
কিন্তু আদালত মনে করে, বিষয়বস্তু একই হওয়ায় একটি বিচারকের অধীনে সব মামলার শুনানি হলে তা সুবিধার হবে।
অন্যদিকে, প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো জানাচ্ছে, তারা “ন্যায্য ব্যবহার” (Fair Use) নীতির অধীনে কাজগুলো ব্যবহার করেছে। এই নীতির মাধ্যমে কিছু পরিস্থিতিতে কপিরাইটযুক্ত কাজ ব্যবহারের অনুমতি পাওয়া যায়।
ওপেনএআই মুখপাত্র জানিয়েছেন, তারা আদালতে প্রমাণ করতে প্রস্তুত যে তাদের মডেলগুলো জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ডেটা ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।
শুধু তাই নয়, লেখকদের একটি অংশ মেটা’র (Meta) বিরুদ্ধেও কপিরাইট লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছেন। তাদের অভিযোগ, মেটা তাদের এআই মডেল প্রশিক্ষণের জন্য ‘শ্যাডো লাইব্রেরি’ (Shadow Library) ব্যবহার করেছে, যেখানে লক্ষ লক্ষ বই সংরক্ষিত আছে।
এর প্রতিবাদে লন্ডনে মেটা অফিসের বাইরে লেখকদের বিক্ষোভও দেখা গেছে।
এ দিকে, অ্যামাজন (Amazon) তাদের কিন্ডল (Kindle) ডিভাইসে এআই-এর মাধ্যমে বইয়ের সারসংক্ষেপ তৈরি করার নতুন একটি ফিচার যুক্ত করতে যাচ্ছে। এই ফিচারের মাধ্যমে পাঠকরা একটি বই শেষ করার আগে এর মূল বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পারবে।
অ্যামাজন বলছে, এটি পাঠকদের জন্য আরও সুবিধাজনক হবে। তবে, অনেকেই এর নির্ভুলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
যুক্তরাজ্যেও (UK) কপিরাইট আইন নিয়ে বিতর্ক চলছে। সরকার এআই কোম্পানিগুলোকে কপিরাইটযুক্ত উপাদান ব্যবহারের অনুমতি দিতে চাইছে, যদি না স্বত্বাধিকারীরা আপত্তি জানান।
এই সিদ্ধান্তের ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক প্রভাব মূল্যায়নের জন্য পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
এই ঘটনাগুলো ডিজিটাল বিশ্বে মেধাস্বত্বের অধিকার এবং এআই প্রযুক্তির ব্যবহারের মধ্যে একটি জটিল সম্পর্ক তৈরি করেছে। বাংলাদেশের লেখক, শিল্পী এবং ডিজিটাল কনটেন্ট নির্মাতাদের জন্য এই ঘটনাগুলো গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি তাদের অধিকার এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিবেশের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
কপিরাইট আইন এবং প্রযুক্তির এই পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে, আমাদের সৃজনশীল জগতের সুরক্ষায় আরও সচেতন হতে হবে।
তথ্য সূত্র: The Guardian