চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক আরোপের প্রতিক্রিয়ায় পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে একগুচ্ছ পদক্ষেপ নিয়েছে চীন। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৪ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক বৃদ্ধি এবং কিছু বিরল মৃত্তিকা উপাদান রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা।
এই পদক্ষেপগুলো দুই দেশের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধের তীব্রতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা যায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার পরেই চীন এই সিদ্ধান্ত নেয়। এর আগে, যুক্তরাষ্ট্র চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধি করেছিল।
সবমিলিয়ে এখন চীনের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৪ শতাংশ। এর জবাবে চীনও পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু পণ্যের ওপর শুল্ক বসিয়েছে।
এর ফলে কয়লা এবং তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) মতো পণ্য আমদানিতেও শুল্ক দিতে হবে।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা জাতীয় নিরাপত্তা ও স্বার্থ রক্ষার জন্য এবং আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা পালনের উদ্দেশ্যে কিছু বিরল মৃত্তিকা উপাদান রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে – স্যামারিয়াম, গ্যাডোলিনিয়াম, টার্বিয়াম, ডিসপ্রোসিয়াম, লুটেশিয়াম, স্ক্যান্ডিয়াম এবং ইট্রিয়াম।
চীনের এই পদক্ষেপের ফলে প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা খাতে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপাদানের সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শুধু তাই নয়, চীন যুক্তরাষ্ট্রের ১৬টি সংস্থাকে তাদের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ তালিকায় যুক্ত করেছে। এর ফলে ওই কোম্পানিগুলো চীনে বিনিয়োগ, আমদানি ও রপ্তানির মতো কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবে না।
এছাড়াও, আরও ১১টি মার্কিন কোম্পানিকে ‘অনির্ভরযোগ্য সত্তা’র তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই তালিকায় যুক্ত হওয়ার কারণে কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে চীন।
তাইওয়ানকে অস্ত্র বিক্রির অভিযোগে স্কাইডিও ইনক ও বিআরআইএনসি ড্রোনসের মতো কোম্পানিগুলো এই তালিকায় রয়েছে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক নীতির বিরুদ্ধে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) অভিযোগ দায়ের করেছে চীন।
চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ ডব্লিউটিওর নিয়ম লঙ্ঘন করেছে এবং এর প্রতিকার চেয়ে তারা আলোচনা চেয়েছে।
চীনের এই সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজারে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। শুক্রবার মার্কিন শেয়ার সূচক উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।
জাপানের প্রধানমন্ত্রীও এই শুল্ক আরোপকে ‘জাতীয় সংকট’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। ইউরোপীয় শেয়ার বাজারেও গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় দরপতন দেখা গেছে।
তবে, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন, বাজার পরিস্থিতি পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নেবে। তারা অর্থনীতির বড় ধরনের পতনের আশঙ্কা করছেন না।
এই বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে, সে বিষয়ে এখনো কোনো সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি।
তবে আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়ায়, বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি খাতে কিছু প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা