মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্বেগের অন্ত নেই। প্রায়ই তিনি অন্যান্য দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতির কথা উল্লেখ করেন এবং বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে অন্যান্য দেশ ‘লুট করছে’। চীনকে তিনি একতরফা চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘রক্তশূন্য’ করার জন্য দায়ী করেন।
এমনকি, কানাডার দুগ্ধপণ্যের ওপর শুল্ক আরোপকে ‘পুরোপুরি লজ্জাজনক’ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। কিন্তু এই সমালোচনার মাঝে প্রায়ই একটি বিষয় এড়িয়ে যান ট্রাম্প—যুক্তরাষ্ট্রের পরিষেবা খাতে উদ্বৃত্ত বাণিজ্য।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে পরিষেবা খাতের অবদান প্রায় ৭০ শতাংশ। এই খাতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ভ্রমণ ও হোটেল, আর্থিক পরিষেবা, গণমাধ্যম ও বিনোদন, বীমা, রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত এবং মেধা সম্পদের ব্যবহারের মতো ব্যবসা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, এই পরিষেবাগুলোর রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে প্রায় ২৫ শতাংশের বেশি অবদান রাখে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থ, আইন, হিসাবরক্ষণ ও বিনোদনসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা শিল্পে যুক্তরাষ্ট্রের একটি শক্তিশালী সুবিধা রয়েছে। আর এই কারণেই দেশটির বাণিজ্য উদ্বৃত্ত হয়।
উদাহরণস্বরূপ, ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ১.০২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পরিষেবা রপ্তানি করেছে। একই সময়ে তারা ৭৪৮.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পরিষেবা আমদানি করেছে।
ফলে দেশটির বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ছিল ২৭৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা অন্তত দুই দশক ধরে চলমান একটি ধারা। বাংলাদেশী মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৩০ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা (প্রতি ডলারের বিনিময় হার অনুযায়ী)।
অর্থনীতিবিদ গ্যারি হফবাউয়ারের মতে, ট্রাম্প হয়তো পরিষেবা বাণিজ্য উদ্বৃত্ত সম্পর্কে অবগত নন, অথবা তাঁর ধারণা, পণ্য বাণিজ্যের ঘাটতির কথা বলে তিনি বেশি সমর্থন আদায় করতে পারবেন।
ট্রাম্পের এই মনোযোগ মূলত সেইসব শ্রমিকদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা, যারা একসময় উৎপাদন খাতে কাজ করতেন, কিন্তু বিভিন্ন কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কাজ হারিয়েছেন।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের এই নীতি যুক্তরাষ্ট্রের পরিষেবা খাতের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। কারণ, অন্যান্য দেশগুলো তখন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে পারে এবং ডিজিটাল পরিষেবাগুলোর ওপর কর আরোপ করতে পারে।
এছাড়া, মেধাস্বত্ব সুরক্ষায় বিধিনিষেধও আরোপ করা হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর জন্য বিদেশি বাজারে প্রবেশাধিকার এবং মেধা সম্পত্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছে। এখন ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে এই পরিষেবা এবং প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো তাদের বাজার হারানোর ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
কোনো কোনো দেশে ইতোমধ্যে ‘ buy local’ -এর মতো প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের পরিষেবাগুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পরিষেবাগুলোর ওপর কর আরোপ করলে তা দেশের বাজারের খরচ বাড়িয়ে দিতে পারে এবং ট্রাম্পের কাছ থেকে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের কারণ হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্প মূলত তাঁর রাজনৈতিক সমর্থন আদায়ের জন্য উৎপাদন খাতের ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা