ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কের খড়গ: মার্কিন ব্র্যান্ড ও বিশ্ব অর্থনীতিতে কেমন প্রভাব?
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শুল্কনীতির কারণে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। এই নীতিগুলো বাস্তবায়িত হলে বিভিন্ন খাতে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে, বিশেষ করে মার্কিন ব্র্যান্ডগুলোর ব্যবসা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এর কারণ হিসেবে জানা যায়, আমদানি খরচ বৃদ্ধি এবং ভোক্তাদের ব্যয় সংকোচনের সম্ভাবনা। এই পরিস্থিতিতে প্রযুক্তি, ফ্যাশন, ভ্রমণ ও আর্থিক খাতের অনেক নামকরা কোম্পানির শেয়ারের দরপতন হয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে গভীর অস্থিরতা তৈরি করেছে।
প্রযুক্তি খাতে এর প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী। অ্যাপল এবং অ্যামাজনের মতো বৃহৎ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো চীনের বাজারের ওপর নির্ভরশীল। ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে চীনে উৎপাদিত পণ্যের ওপর শুল্কের হার বেড়ে যাওয়ায় এই কোম্পানিগুলোর উৎপাদন খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।
উদাহরণস্বরূপ, অ্যাপলের কথা ধরুন। তারা তাদের পণ্যের যন্ত্রাংশ এবং উৎপাদনে চীনের ওপর নির্ভরশীল। শুল্ক বাড়লে আইফোনসহ তাদের অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়বে, যা ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতাকে প্রভাবিত করবে।
একই ধরনের সমস্যায় পড়তে পারে অ্যামাজনও, কারণ তাদের ব্যবসা মূলত চীন থেকে আসা পণ্যের ওপর নির্ভরশীল। এমনকি তাইওয়ান থেকে আমদানি করা চিপের উপর শুল্ক আরোপের কারণে এনভিদিয়ার মতো কোম্পানিও ক্ষতির শিকার হতে পারে।
ফ্যাশন শিল্পও এই শুল্কনীতি থেকে বাঁচতে পারবে না। নাইকি, গ্যাপ, এবং লেভাইস-এর মতো ব্র্যান্ডগুলো তাদের পোশাকের জন্য প্রধানত এশিয়ার বিভিন্ন দেশের ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া এবং চীন থেকে তারা তাদের পোশাক তৈরি করে।
শুল্ক বাড়লে এই কোম্পানিগুলোর উৎপাদন খরচ বাড়বে, ফলে তাদের পণ্যের দামও বাড়াতে হবে। নাইকির শেয়ারের দাম এরই মধ্যে কমে গেছে এবং তাদের জর্ডান ব্র্যান্ডের জুতার দাম বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
ভ্রমণ ও পর্যটন খাতেও শুল্কের প্রভাব দেখা যাচ্ছে। বোয়িং এবং ডিজনি’র মতো কোম্পানিগুলো এরই মধ্যে ক্ষতির শিকার হয়েছে। বোয়িং, যারা যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক, তাদের উৎপাদন খরচ বাড়বে কারণ তাদের যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্কের প্রভাব পড়বে।
অন্যদিকে, ডিজনির থিম পার্ক এবং ক্রুজ ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, কারণ ভোক্তারা ভ্রমণ ব্যয় কমাতে পারে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও এই শুল্কনীতি থেকে মুক্ত নয়। আমেরিকান এক্সপ্রেস এবং গোল্ডম্যান স্যাকসের মতো কোম্পানিগুলো শেয়ারের দামে বড় ধরনের পতন দেখেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শুল্কনীতি বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা ডেকে আনতে পারে, যা ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন আসে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর প্রভাব কী হতে পারে? বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিলে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প (আরএমজি) ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের তৈরি পোশাকের চাহিদা কমে যেতে পারে।
এছাড়া, শুল্কের কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বাড়লে, তা বাংলাদেশের বাজারেও প্রভাব ফেলতে পারে।
বর্তমানে, এই শুল্কনীতির চূড়ান্ত রূপ এখনো আসেনি। তবে, এর সম্ভাব্য প্রভাবগুলো বিবেচনা করে, সংশ্লিষ্ট সকলের সতর্ক থাকা উচিত। বিশেষ করে, বিশ্ব অর্থনীতির এই অস্থির পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের দেশের অর্থনীতির সুরক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান