ভিসা এবং ই-টিএ (eTA) নিয়ে অনেক সময় আমাদের মনে নানান প্রশ্ন জাগে। বিশেষ করে যারা বিভিন্ন দেশে ঘুরতে যেতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য এই বিষয়গুলো জানা খুবই জরুরি।
ভিসা (Visa) এবং ইটিএ (eTA)-এর মধ্যে পার্থক্য কী, কীভাবে আবেদন করতে হয়, কত খরচ হয়—এমন নানা বিষয় নিয়ে আজকের এই প্রতিবেদনে আলোচনা করা হলো।
প্রথমে আসা যাক, ভিসা কী? ভিসা হলো একটি দেশের সরকার কর্তৃক প্রদত্ত অনুমতিপত্র, যা অন্য দেশের নাগরিকদের সেই দেশে প্রবেশ এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত থাকার সুযোগ দেয়।
অন্যদিকে, ইটিএ (eTA) হলো ইলেকট্রনিক ট্রাভেল অথরাইজেশন, যা মূলত স্বল্প সময়ের জন্য পর্যটকদের জন্য প্রযোজ্য।
ভিসা এবং ইটিএ-এর মধ্যে মূল পার্থক্যগুলো হলো:
যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী পাসপোর্টগুলোর মধ্যে একটি। বর্তমানে, এই পাসপোর্টধারীরা ভিসা ছাড়াই ১২০টির বেশি দেশে ভ্রমণ করতে পারেন।
তবে, বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। বিভিন্ন সূচক অনুযায়ী, বাংলাদেশের পাসপোর্টধারীরা তুলনামূলকভাবে কম দেশে ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করতে পারেন।
তবে, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনা ও চুক্তির মাধ্যমে এই সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে।
ভিসা অথবা ইটিএ-এর জন্য আবেদন করার সময় কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র লাগে।
সাধারণত, আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, পাসপোর্টের নম্বর, ভ্রমণের তারিখ এবং গন্তব্যস্থলের ঠিকানা ইত্যাদি দিতে হয়।
এছাড়াও, ছবি, হোটেলের রিজার্ভেশন এবং ভ্রমণের আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণস্বরূপ ব্যাংক স্টেটমেন্টও জমা দিতে হতে পারে। তাই, ভ্রমণের পরিকল্পনা করার সময় এই বিষয়গুলো মাথায় রাখা উচিত।
ভিসা এবং ইটিএ-এর খরচ বিভিন্ন দেশের জন্য ভিন্ন হয়ে থাকে।
কিছু ইটিএ-এর জন্য ১০ ডলারের মতো খরচ হয়, আবার কিছু ভিসার জন্য ১০০ ডলারের বেশি লাগতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, ব্রাজিলের ই-ভিসার বর্তমান খরচ প্রায় ৮০.৯০ ডলার।
তাই, আবেদন করার আগে সংশ্লিষ্ট দেশের ওয়েবসাইটে ফি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত।
ভিসা এবং ইটিএ-এর মেয়াদও ভিন্ন হতে পারে।
সাধারণত, এগুলো কয়েক সপ্তাহ থেকে শুরু করে ১৮০ দিন পর্যন্ত সময়কালের জন্য ইস্যু করা হয়।
যদি আপনি একাধিক দেশ ভ্রমণের পরিকল্পনা করেন, তাহলে নিশ্চিত করুন যে আপনার মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা (Multiple Entry Visa) আছে।
ভিসা বা ইটিএ-এর জন্য ভ্রমণের কত দিন আগে আবেদন করা উচিত?
সাধারণত, ভ্রমণের তারিখের কয়েক মাস আগে আবেদন করা ভালো।
ইটিএ-এর ক্ষেত্রে এটি কয়েক দিন বা ঘণ্টার মধ্যে পাওয়া যেতে পারে, তবে হাতে সময় নিয়ে আবেদন করা বুদ্ধিমানের কাজ।
ইউরোপে ভ্রমণের ক্ষেত্রে ইটিএ-এর (ETIAS) বিষয়টি এখনো পুরোপুরি কার্যকর হয়নি।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (European Union) জানিয়েছে, এই সিস্টেমটি সম্ভবত ২০২৬ সালের শেষ দিকে চালু হবে।
এছাড়া, ইইউর নতুন এন্ট্রি/এক্সিট সিস্টেম (EES) ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের মতো কিছু দেশে যেতে হলে ইটিএ-এর প্রয়োজন হয়।
যুক্তরাজ্যের ইটিএ-এর জন্য খরচ হয় ১০ পাউন্ড (প্রায় ১,৪০০ টাকা), যা দুই বছর পর্যন্ত বহাল থাকে।
অস্ট্রেলিয়ার ইটিএ-এর খরচ প্রায় ২০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় ১,৫০০ টাকা) এবং নিউজিল্যান্ডের ইটিএ-এর খরচ ১৭ নিউজিল্যান্ড ডলার (প্রায় ১,১০০ টাকা)।
এছাড়াও, নিউজিল্যান্ডে ভ্রমণকালে ১০০ ডলার পর্যটন কর দিতে হয়।
ভিসা বা ইটিএ ছাড়াই আপনি কিছু দেশে ভ্রমণ করতে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টধারীরা ১২০টির বেশি দেশে ভিসা ছাড়াই যেতে পারেন।
এর মধ্যে রয়েছে কানাডা ও মেক্সিকোর মতো জনপ্রিয় গন্তব্য।
এছাড়াও, দক্ষিণ আমেরিকা এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলের অনেক দেশেই ভিসা বা ইটিএ-এর প্রয়োজন হয় না।
এশিয়ার মধ্যে জাপান, থাইল্যান্ডের মতো কয়েকটি দেশেও ভিসা ছাড়াই ভ্রমণ করা যায়।
আফ্রিকার কিছু আকর্ষণীয় গন্তব্যেও ভিসা ছাড়াই যেতে পারেন।
বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে শুধু ভিসা বা ইটিএ থাকলেই চলে না, আরও কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হয়।
যেমন—আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ অন্তত ৬ মাস থাকতে হবে।
ভ্রমণের আগে পাসপোর্ট এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত রাখা উচিত।
এছাড়াও, গন্তব্য দেশের নিয়মকানুন সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া জরুরি।
সুতরাং, বিদেশ ভ্রমণের পরিকল্পনা করার আগে ভিসার নিয়মকানুন সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন।
আপনার ভ্রমণ হোক আনন্দময় এবং নিরাপদ!
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক