ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা: রাশিয়াকে সময়সীমা বেঁধে দিলেন মার্কিন সিনেটর।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র সচিব মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে রাশিয়াকে খুব শীঘ্রই আলোচনায় ফলপ্রসূ পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি সম্প্রতি রুশ প্রেসিডেন্টের একজন দূতের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এবং তাকে এই বার্তা দিয়েছেন। ব্রাসেলসে দু’দিনের ন্যাটো পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের শেষে রুবিও বলেন, “সময় ফুরিয়ে আসছে।”
রুবিও জোর দিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চায় কয়েক সপ্তাহের মধ্যে রাশিয়া যেন আলোচনার টেবিলে সুস্পষ্ট পদক্ষেপ নেয়। তিনি আরও বলেন, “একটা সময়ে এটা পরিষ্কার হয়ে যাবে যে, আপনারা (রাশিয়া) শান্তি চান, নাকি চান না।”
যদিও রুবিও সরাসরি কোনো হুমকি দেননি, তবে এর মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসনের মনোভাব ফুটে উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ে রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতপার্থক্যের বিষয়টিও স্পষ্ট হয়েছে। জানা গেছে, ইউক্রেনে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার কারণে ট্রাম্প রুশ নেতার উপর “ক্ষুব্ধ” হয়েছিলেন।
ইউক্রেন ও ইউরোপীয় নেতারা মনে করেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সময়ক্ষেপণ করছেন এবং পরিস্থিতি তার অনুকূলে আসার অপেক্ষা করছেন। তবে ট্রাম্প এবং তার দূত স্টিভ উইটকফ, যিনি এ বছর পুতিনের সঙ্গে দু’বার দেখা করেছেন, তারা জোর দিয়ে বলছেন যে পুতিন একটি শান্তি চুক্তি চান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শীর্ষস্থানীয় ন্যাটো কর্মকর্তা ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত বৈঠকে জানান, “অবশ্যই, রাশিয়া শান্তি চায়। তবে উপযুক্ত শর্তে, অর্থাৎ মস্কোর শর্ত অনুযায়ী।”
রুবিও গত দুই মাসে সৌদি আরবে দু’বার গিয়েছেন। সেখানে তিনি শীর্ষস্থানীয় রুশ ও ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি এবং তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধের অবসানের জন্য একটি চুক্তির বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
আলোচনার অগ্রগতি প্রসঙ্গে রুবিও বলেন, “আলোচনার নামে আর আলোচনা নয়, এবার ফল পাওয়া দরকার।”
এদিকে, ওয়াশিংটন সফরকালে রুশ প্রেসিডেন্টের দূত কিরিল দিমিত্রিভ সিএনএনকে বলেন, ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা বন্ধের বিষয়ে সম্প্রতি যে চুক্তি হয়েছে, তা সফলতার লক্ষণ। তিনি এটিকে “গত তিন বছরের মধ্যে প্রথম ডি-এস্কালেশন” হিসেবে উল্লেখ করেন।
তবে ন্যাটো কর্মকর্তাদের মতে, এই চুক্তির শর্তগুলো এখনো স্পষ্ট নয়। রাশিয়া এখনো স্বল্প-পাল্লার ড্রোন ব্যবহার করে হামলা চালাচ্ছে এবং ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে জ্বালানি লক্ষ্যবস্তুগুলোর তালিকা নিয়ে এখনো মতপার্থক্য রয়েছে।
ন্যাটো কর্মকর্তাদের মতে, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামগ্রিক লক্ষ্য এখনো পরিবর্তন হয়নি। তারা বলছেন, ক্রেমলিন (রাশিয়ার সরকার) আলোচনা করতে প্রস্তুত বলে জানালেও, আলোচনার চেয়ে দর কষাকষির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, “আমরা এখনো সন্দেহ করি যে পুতিনের দল ভালো উদ্দেশ্যে আলোচনার টেবিলে বসছে।”
অন্যদিকে, রাশিয়া সম্প্রতি কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় সেনা সমাবেশের ঘোষণা করেছে, যা শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ইতিবাচক লক্ষণ নয় বলেই মনে করছেন অনেকে।
হোয়াইট হাউস যখন কৃষ্ণ সাগরে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধের ঘোষণা দেয়, তখন রাশিয়া কিছু শর্ত যুক্ত করে, যার মধ্যে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টিও ছিল।
রুশ কর্মকর্তারা বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের চুক্তিতে যুদ্ধের “মূল কারণগুলো” বিবেচনা করতে হবে। রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ জানান, তারা আমেরিকানদের প্রস্তাবগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছেন, তবে তাদের প্রধান দাবি, অর্থাৎ সংঘাতের মূল কারণগুলো সমাধানে কোনো পদক্ষেপ না থাকায়, তারা তা গ্রহণ করতে পারছেন না।
ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত ন্যাটো-ইউক্রেন কাউন্সিলের বৈঠকে সদস্য দেশগুলো ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে। তবে ট্রাম্প প্রশাসন ইউক্রেনকে দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দিতে রাজি হয়নি।
আগের মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করতেন। তবে রুবিও বৈঠকের সময় ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রেই সিবির সাথে সংক্ষিপ্তভাবে সাক্ষাৎ করেন।
সিবির অভিযোগ করেন, রাশিয়ার পক্ষ থেকে জ্বালানি বিষয়ক যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করা হচ্ছে এবং পুতিনের দল আলোচনার প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় রাশিয়া যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার আগ্রহ দেখিয়েছে।
ওয়াশিংটনে দিমিত্রিভের সফর, যিনি রাশিয়ার সার্বভৌম সম্পদ তহবিলের প্রধান এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার পক্ষে, তা বাইডেন প্রশাসনের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দ্বারা অবরুদ্ধ হওয়ার পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পুনরায় প্রবেশ করার রুশ আগ্রহকে তুলে ধরে।
ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা রাশিয়া উদ্বেগকে বোঝেন। দিমিত্রিভ রুশ গণমাধ্যমকে জানান, তার এবং উইটকফের মধ্যে আলোচনার মূল বিষয় ছিল রুশ-মার্কিন সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করা, যা বাইডেন প্রশাসনের আমলে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
তবে ন্যাটো কর্মকর্তাদের মতে, রাশিয়া আলোচনার ধারাবাহিকতা রাখতে চাইছে, আবার একই সঙ্গে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবগুলো প্রত্যাখ্যান করার চেষ্টা করছে। তাদের মতে, রাশিয়া সম্ভবত সময়ক্ষেপণ করতে চাইছে এবং নিষেধাজ্ঞাসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ে রাশিয়ার স্থান পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন