ঘূর্ণিঝড়ের বিপদ বাড়ছে? জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাড়ছে কি?
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে বিশ্বের আবহাওয়ায় যে পরিবর্তন আসছে, তা এখন প্রায় সকলেরই জানা। এর ফলস্বরূপ, প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোও যেন আরও মারাত্মক রূপ নিচ্ছে।
তাপপ্রবাহ, দাবানল এবং বন্যার মতো ঘটনাগুলো বাড়ছে, কিন্তু টর্নেডোর ওপর এর প্রভাব বেশ জটিল।
যদিও উন্নত প্রযুক্তির কারণে ১৯৫০ সাল থেকে টর্নেডোর সংখ্যা বেড়েছে বলে রেকর্ড পাওয়া যায়, তবে আবহাওয়ার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর মূল কারণ হলো ডপলার রাডার-এর মতো উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।
বড় ধরনের টর্নেডোর সংখ্যায় তেমন কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি।
তবে নর্দার্ন ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়াবিদ ভিক্টর জেনসিনি মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে টর্নেডোর ওপরও প্রভাব পড়ছে। তিনি বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কি এই টর্নেডো হয়েছে?—এই প্রশ্ন করার চেয়ে বরং ধরে নেওয়াই ভালো যে জলবায়ু পরিবর্তন এর পেছনে একটা ভূমিকা রেখেছে। প্রতিটি চরম আবহাওয়ার ঘটনার সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের একটা সম্পর্ক আছে।”
টর্নেডো কীভাবে তৈরি হয়?
টর্নেডো কিভাবে তৈরি হয়, তা বুঝতে হলে এর পেছনের কিছু বিষয় জানা দরকার। উষ্ণ এবং আর্দ্র বাতাস যখন শীতল ও শুষ্ক বাতাসের নিচে প্রবাহিত হয়, তখন এটি অস্থির অবস্থার সৃষ্টি করে।
এর ফলে টর্নেডোর জন্ম হয়।
যখন উষ্ণ বাতাস উপরের দিকে উঠে আসে, তখন বাতাসের দিক ও গতির হঠাৎ পরিবর্তন (wind shear) হয়। এই পরিবর্তনের ফলে বাতাস একটি ঘূর্ণন সৃষ্টি করে, যা টর্নেডোর আকার নেয়।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে, যা টর্নেডোর শক্তি যোগায়। এর ফলে বড় ধরনের টর্নেডোর সংখ্যাও বাড়তে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, সম্প্রতি আমেরিকার মধ্যাঞ্চলে বেশ কয়েকটি বড় টর্নেডোর ঘটনা ঘটেছে, যেখানে বহু মানুষ নিহত হয়েছে এবং ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে।
কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন কীভাবে টর্নেডোর বাতাসের পরিবর্তন ঘটাচ্ছে, তা এখনো পরিষ্কার নয়।
আবহাওয়াবিদ জেফ মাস্টার্স এর মতে, উষ্ণতা বাড়ার কারণে হয়তো টর্নেডোর ঘূর্ণন শক্তি কমে যাচ্ছে।
কারণ, মেরু অঞ্চল দ্রুত উষ্ণ হচ্ছে, যা জেট স্ট্রিমের গতি কমিয়ে দিতে পারে। তবে এর ফল কী হবে, তা বলা কঠিন।
তিনি আরও বলেন, যখন টর্নেডোর পরিবেশ তৈরি হয়, তখন বেশি তাপের কারণে আরও শক্তিশালী টর্নেডো হতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৫৪ সাল থেকে একটি ঝড়ের সময় তৈরি হওয়া টর্নেডোর সংখ্যা বাড়ছে।
টর্নেডো নিয়ে গবেষণা করা কঠিন, কারণ ছোট আকারের টর্নেডোগুলো পর্যবেক্ষণ করা কঠিন।
সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, ভবিষ্যতে পূর্বাঞ্চলে সুপারসেল নামক বড় আকারের ঝড় বাড়বে এবং গ্রেট প্লেইনস অঞ্চলে কমতে পারে। এই ঝড়গুলো সাধারণত শীতের শেষ এবং বসন্তের শুরুতে বেশি দেখা যায়, যা আগেকার সময়ের চেয়ে ভিন্ন।
যুক্তরাষ্ট্রে টর্নেডোর স্থান পরিবর্তনের একটি প্রবণতাও দেখা যাচ্ছে।
১৯৭৯ সাল থেকে মিসিসিপি নদীর পশ্চিম দিক থেকে পূর্বাঞ্চলে, বিশেষ করে জনবহুল এলাকাগুলোতে টর্নেডোর প্রভাব বাড়ছে।
এর কারণ জলবায়ু পরিবর্তন হতে পারে, আবার প্রাকৃতিক কারণেও এমনটা ঘটতে পারে।
জনবসতিপূর্ণ এলাকায় টর্নেডোর সংখ্যা বাড়লে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বাড়ে।
আমেরিকার ক্ষেত্রে, মোবাইলhome-এর মতো দুর্বল কাঠামো টর্নেডোর ঝুঁকিতে থাকে।
তবে, উন্নত পূর্বাভাস এবং সতর্কীকরণ ব্যবস্থার কারণে টর্নেডোর কারণে মৃত্যুর হার কমেছে।
ভবিষ্যতে এই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচতে হলে, আমাদের উন্নত পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিতে হবে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক