স্পেনে আবাসন সংকট: প্রতিবাদে উত্তাল জনতা
ইউরোপের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ স্পেনে বর্তমানে চলছে তীব্র আবাসন সংকট। একদিকে আকাশছোঁয়া ভাড়ার চাপ, অন্যদিকে স্বল্প মূল্যের আবাসনের অভাব – এই দুইয়ের জেরে দেশটির বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদে নেমেছেন সাধারণ মানুষ।
পর্যটন শিল্পের প্রসারের কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, গত এক দশকে স্পেনে গড় ভাড়া দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে, এবং বাড়ির দাম বেড়েছে প্রায় ৪৪ শতাংশ। একই সময়ে, ভাড়া বাড়ির সরবরাহ অর্ধেকেরও বেশি কমে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পর্যটকদের জন্য স্বল্পমেয়াদি ভাড়ার চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় দীর্ঘমেয়াদে ভাড়া দেওয়ার প্রবণতা হ্রাস পেয়েছে, যা সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।
এই পরিস্থিতিতে, মাদ্রিদসহ বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদকারীরা একত্রিত হয়ে তাদের অধিকারের দাবিতে সোচ্চার হচ্ছেন। বিক্ষোভকারীরা সরকারের নীতির সমালোচনা করে বলছেন, বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং জনগণের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে।
তাদের মূল অভিযোগ, একদিকে যেমন পর্যটকদের আকর্ষণ করার চেষ্টা চলছে, তেমনই সাধারণ মানুষের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না।
ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় স্পেনে সরকারি আবাসনের পরিমাণ অনেক কম। উদাহরণস্বরূপ, অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি)-এর গড় যেখানে ৭ শতাংশ, সেখানে স্পেনে সরকারি আবাসনের হার ২ শতাংশের নিচে।
ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যে এই হার যথাক্রমে ১৪ ও ১৬ শতাংশ।
বার্সেলোনার একটি এলাকার বাসিন্দা ৬৫ বছর বয়সী মার্গারিটা আইজপুরু জানিয়েছেন, তার এলাকার প্রায় ১০০টি পরিবারের ভাড়া চুক্তি নবায়ন করা হয়নি। বাড়ি মালিকরা এখন পর্যটকদের কাছে স্বল্প সময়ের জন্য ভাড়া দিতে বেশি আগ্রহী।
আবাসন সংকটের পেছনে আরও একটি কারণ হলো নতুন বাড়ি নির্মাণের অভাব। ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক সংকটের আগে যেখানে প্রতি বছর প্রচুর সংখ্যক বাড়ি তৈরি হতো, সেখানে বর্তমানে এই সংখ্যা অনেক কমে গেছে।
স্পেনে প্রতি বছর রেকর্ড সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটে। গত বছর প্রায় ৯ কোটি ৪০ লাখ পর্যটক দেশটি ভ্রমণ করেছেন, যা বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
পর্যটকদের এই বিপুল আনাগোনা একদিকে যেমন দেশের অর্থনীতিকে চাঙা করছে, তেমনই আবাসন সংকটকে আরও তীব্র করে তুলছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা