ফ্রান্সে রাজনৈতিক অস্থিরতা: মারিন ল্য পেনের বিরুদ্ধে রায় এবং বিক্ষোভের প্রস্তুতি
ফ্রান্সের রাজনীতিতে এখন চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। সম্প্রতি দেশটির কট্টর ডানপন্থী নেত্রী মারিন ল্য পেনের বিরুদ্ধে একটি আর্থিক কেলেঙ্কারির মামলায় রায় ঘোষণার পর দেশজুড়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
এর জেরে ল্য পেনকে ২০২৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে এবং রায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে ল্য পেনের দল ন্যাশনাল র্যালি (Rassemblement National – RN)।
একই সময়ে, বামপন্থী এবং মধ্যপন্থী দলগুলো আদালতের এই সিদ্ধান্তের সমর্থনে পাল্টা সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে।
জানা গেছে, ল্য পেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি ইউরোপীয় পার্লামেন্টের তহবিল থেকে প্রায় ৪ মিলিয়ন ইউরো (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় ৪৮ কোটি টাকার বেশি) আত্মসাৎ করেছেন। এই অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় তাঁর নির্বাচনে অংশগ্রহণের ওপর পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
এই রায়ের প্রতিবাদে ল্য পেনের দল ‘গণতন্ত্র বাঁচাও’ স্লোগান নিয়ে দেশব্যাপী বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে বাম ও মধ্যপন্থী দলগুলো আদালতের প্রতি সমর্থন জানিয়ে রাজধানীতে পৃথক সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বিক্ষোভ সমাবেশ দুটি কার্যত ‘ক্ষমতার লড়াই’-এ পরিণত হতে পারে। একদিকে ল্য পেনের দল তাঁদের নেত্রীর প্রতি সমর্থন জানাতে চাইছে, অন্যদিকে বিরোধীরা আইনের শাসনের প্রতি তাঁদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করতে চাইছে।
ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বেইরু উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বজায় রেখে সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার কথা বলেছেন।
তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
শুধু মারিন ল্য পেনই নন, এর আগে আরও কয়েকজন ফরাসি রাজনীতিক আর্থিক কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত হয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, ফেব্রুয়ারী ২০২৪-এ বেইরুর মধ্যপন্থী দলের আটজন সদস্যকে একই ধরনের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল।
তাঁদের জরিমানা করা হয় এবং কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এমনকি তাঁদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই বিক্ষোভ সমাবেশের মাধ্যমে ল্য পেনের দল তাঁদের রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করবে।
যদিও জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, ল্য পেনের প্রতি জনগণের সমর্থন আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে। একটি জরিপে দেখা গেছে, ৬১ শতাংশ ফরাসি নাগরিক ল্য পেনের এই রায়কে সঠিক বলে মনে করেন।
ল্য পেনের দল বরাবরই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার কথা বলে এসেছে। এমনকি অতীতেও দেখা গেছে, তাঁর দল সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে কঠোর পদক্ষেপ নিতে সোচ্চার হয়েছে।
তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, বিক্ষোভ সমাবেশে আসা সকলের সমর্থন ল্য পেনের প্রতি নাও থাকতে পারে। কারণ, এই ধরনের সমাবেশে সাধারণত দলের সমর্থক এবং অনুসারীরাই বেশি অংশগ্রহণ করে।
এই পরিস্থিতিতে, ফ্রান্সের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন জেগেছে। আগামী ২০২৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পর্যন্ত এই পরিস্থিতি কিভাবে নিয়ন্ত্রণে আসে, এখন সেটাই দেখার বিষয়।
তথ্য সূত্র: The Guardian