অবিশ্বাস্য জয়, অশ্রুসিক্ত চোখে পিতার আনন্দ: গ্র্যান্ড ন্যাশনাল জিতল ‘নিক রকেট’
ঘোড়দৌড়ের জগৎ সবসময়ই উত্তেজনাপূর্ণ। সেখানে অপ্রত্যাশিত ঘটনা প্রায়ই ঘটে, যা দর্শকদের মনে গভীর দাগ কাটে।
সম্প্রতি, এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে বিশ্ববিখ্যাত গ্র্যান্ড ন্যাশনাল ঘোড়দৌড়ে। ‘নিক রকেট’ নামের একটি ঘোড়া, যার জয় পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল সামান্য, সেই দৌড়ে জয়লাভ করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।
আর এই জয়ের পেছনে ছিল এক পিতার আনন্দাশ্রু, এক পুত্রের অদম্য চেষ্টা এবং এক প্রয়াত নারীর স্বপ্নপূরণের গল্প।
প্রতিযোগিতায় ‘নিক রকেট’-এর জয় ছিল যেন রূপকথার মতো। কারণ, বাজি ধরার বাজারে তার প্রতিকূলতা ছিল ৩৩-১।
অর্থাৎ, তার জেতার সম্ভাবনা ছিল খুবই কম। কিন্তু ঘোড়াটি যখন রেসের ট্র্যাক দিয়ে উড়তে শুরু করল, তখন সবাই বুঝতে পারছিল, কিছু একটা অসাধারণ ঘটতে চলেছে।
আর এই অসাধ্য সাধন করেছেন আর কেউ নন, বিখ্যাত প্রশিক্ষক উইলি মালিন্সের পুত্র প্যাট্রিক মালিন্স।
পিতার চোখে জল:
যখন প্যাট্রিক মালিন্স জয়সূচক রেখা অতিক্রম করলেন, তখন গ্যালারিতে থাকা তাঁর বাবা উইলি মালিন্সের প্রতিক্রিয়া ছিল ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।
আবেগ যেন বাঁধ ভেঙে বেরিয়ে আসছিল। আনন্দে তাঁর চোখ দুটো ছলছল করে ওঠে।
দীর্ঘদিন ধরে খেলাধুলার জগতে থাকা এই মানুষটি সাধারণত নিজের আবেগ গোপন রাখতে পারদর্শী।
কিন্তু পুত্রের এই সাফল্যে তিনি নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “ছেলের হাতে জাতীয় দৌড় জেতাতে পারাটা সত্যিই অসাধারণ।”
গল্পের অন্য দিক:
এই জয়ের পেছনে ছিল এক হৃদয়বিদারক গল্প। ‘নিক রকেট’-এর আসল মালিক ছিলেন স্যাডি অ্যান্ড্রু, যিনি ছিলেন স্টুয়ার্ট অ্যান্ড্রুর স্ত্রী।
স্যাডি চেয়েছিলেন, উইলি মালিন্স যেন তাঁর ঘোড়াটির প্রশিক্ষক হন।
তাঁর এই ইচ্ছাই পূরণ হয়েছে। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত, তিনি ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
স্টুয়ার্ট অ্যান্ড্রু জানিয়েছেন, তাঁর স্ত্রী সবসময় চাইতেন, উইলি মালিন্সের তত্ত্বাবধানে তাঁর ঘোড়া প্রশিক্ষণ নিক।
এমনকি, স্যাডি যখন জানতে পারেন তাঁর ক্যান্সার হয়েছে, তখনও তিনি চেয়েছিলেন, তাঁর ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিক।
স্যাডির মৃত্যুর পর, উইলি মালিন্স এই ঘোড়াটিকে প্রস্তুত করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন এবং অবশেষে তার ফল পাওয়া যায় গ্র্যান্ড ন্যাশনাল জয়ের মাধ্যমে।
দৌড়ের বিবরণ:
প্যাট্রিক মালিন্স ছিলেন একজন অপেশাদার জকি, কিন্তু তাঁর দক্ষতা ছিল অসাধারণ।
তিনি ঘোড়াটিকে চমৎকারভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন এবং জয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান।
রেসের পরে তিনি বলেন, “আমার বাবা খুবই আবেগপ্রবণ মানুষ নন, কিন্তু আজ তাঁর চোখে জল দেখাটা আমার জন্য খুবই আনন্দের ছিল।”
গ্র্যান্ড ন্যাশনাল-এর এই জয় শুধু একটি ঘোড়দৌড় ছিল না, বরং এটি ছিল একটি পরিবারের স্বপ্নপূরণ।
যেখানে ছিল পিতার আবেগ, পুত্রের সাহস এবং প্রয়াত এক নারীর ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান