ধনী মানুষের বেপরোয়া জীবন নিয়ে নির্মিত নতুন একটি টেলিভিশন সিরিজে অভিনেতা জোন হাম। “ইয়োর ফ্রেন্ডস অ্যান্ড নেইবার্স” নামের এই সিরিজে তিনি একজন হেজ ফান্ড ম্যানেজারের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন, যিনি কাজ হারানোর পর নিজের বিলাসবহুল জীবন বজায় রাখতে বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকে চুরি করতে বাধ্য হন।
এই সিরিজে সমাজের ধনী ব্যক্তিদের জীবনযাত্রা এবং তাদের নৈতিক অবক্ষয় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
সিরিজটিতে, হাম অ্যান্ড্রু “কুপ” কুপার নামের এক ব্যক্তির চরিত্রে অভিনয় করেছেন। কুপারের চরিত্রে অভিনয় করেছেন যিনি ডিভোর্সের পর চাকরি হারান এবং সমাজের উচ্চবিত্তের জীবনযাত্রার ধারা বজায় রাখতে বন্ধু-বান্ধবদের জিনিসপত্র চুরি করতে শুরু করেন।
সিরিজটি তৈরি হয়েছে এমন এক সময়ে যখন বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং ভোগবাদ একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয়।
জোন হাম সিএনএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “বর্তমানে টেলিভিশনে এমন অনেক সিরিজ তৈরি হচ্ছে যেখানে ধনী ব্যক্তিদের খারাপ আচরণগুলো তুলে ধরা হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, ‘দ্য হোয়াইট লোটাস’, ‘বিগ লিটল লাইস’ অথবা ‘দ্য পারফেক্ট কাপল’-এর মতো সিরিজেও আমরা এটি দেখতে পাই।”
তিনি আরও বলেন, “সম্ভবত এই ধরনের একটি সিরিজের জন্য সঠিক সময় এসেছে, যা মানুষকে প্রশ্ন করতে শেখাবে—আমরা আসলে কী করছি? আমরা কী বোঝাতে চাইছি? জীবন কি কেবল বেশি পরিমাণে জিনিসপত্র সংগ্রহ করার নাম? হয়তো জীবনের সবচেয়ে পরিপূর্ণ পথ এটি নয়।”
সিরিজটিতে কুপের বন্ধু বার্নি চই চরিত্রে অভিনয় করেছেন হুন লি। তিনি মনে করেন, এই সিরিজে অর্থের মোড়কে ঢাকা থাকা মানুষের আসল সমস্যাগুলো তুলে ধরা হয়েছে।
“আমার মনে হয়, এই সিরিজে দেখানো হয়েছে যে, কীভাবে বিত্তবৈভব অনেক সময় মানুষের ভেতরের গভীর ক্ষতগুলো ঢেকে রাখে। কুপের চুরির মূল ধারণা হলো, মূল্যবান জিনিসগুলো সহজে নজরে আসে না, কারণ সেগুলো এলোমেলোভাবে হারিয়ে যায়।
এর মাধ্যমে বোঝানো হয়, জিনিসগুলোর প্রতি তাদের (ধনী) কোনো গভীর আকর্ষণ নেই।”
সিরিজটির নির্মাতা ও লেখক জোনাথন ট্রপার। তিনি নিজেও নিউ ইয়র্কের ধনী সম্প্রদায়ের জীবন সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত।
লেখক হিসেবে সমাজের এই শ্রেণির মানুষের জীবনযাত্রা কাছ থেকে দেখেছেন তিনি। ট্রপার বলেছেন, এই সিরিজটি খুব বেশি বিচারমূলক নয়।
“আমরা এখানে প্রত্যেককে সত্যিকারের মানুষ হিসেবে দেখছি। এর মধ্যে ব্যঙ্গাত্মক একটা দিক আছে। এই সিরিজে ভোগবাদ নিয়ে কথা বলা হয়েছে, তবে আমরা চরিত্রগুলোর প্রতি সহানুভূতিশীল এবং তাদের সমস্যাগুলো সমাজের অন্য স্তরের মানুষের মতোই।”
সিরিজে কুপারের প্রাক্তন স্ত্রী মেল কুপার চরিত্রে অভিনয় করেছেন আমান্ডা পিট এবং কুপারের বন্ধু সামান্থা “স্যাম” লেভিট চরিত্রে অভিনয় করেছেন অলিভিয়া মুন্ন।
ওয়েস্টমন্ট ভিলেজ নামের একটি কাল্পনিক স্থানে এই সিরিজের গল্প সাজানো হয়েছে। অলিভিয়া মুন্ন এই সিরিজে সমাজের ধনী ব্যক্তিদের জীবনকে সূক্ষ্মভাবে ফুটিয়ে তোলার কথা বলেছেন।
সিরিজে নারীদের চরিত্র নিয়ে আমান্ডা পিট বলেন, “আমার মনে হয়, নারীরা সাধারণত উচ্চ-ক্ষমতার পেশা বেছে নিতে চান না।
সমাজে তাদের জন্য ‘লেডিস হু লঞ্চ’ ধরনের সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে, যেখানে তারা তাদের যৌবনের বুদ্ধিবৃত্তিক আগ্রহকে বিলাসিতা এবং সমাজের সঠিক প্রতীক অর্জনের দিকে পরিচালিত করে।
এটি যেমন বিরক্তিকর, তেমনই এতে আসক্তিও রয়েছে। এর মাধ্যমে এক ধরনের হতাশা প্রকাশ পায়।”
অভিনয়ের মাধ্যমে হলিউডের এই জগৎ সম্পর্কে জানতে পেরে জোন হামের কি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে “ম্যাড মেন” অভিনেতা হেসে বলেন, “আমি সবসময়ই এই ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে কিছুটা সন্দিহান ছিলাম।”
তবে তিনি দর্শকদের জন্য তার নতুন সিরিজটি নিয়ে আশাবাদী। “সবশেষে, আমি আশা করি তারা (দর্শক) আনন্দ পাবে।
আমরা এমন কিছু তৈরি করার চেষ্টা করছি যা মানুষকে আনন্দ দেবে এবং একইসঙ্গে ভাবতে বাধ্য করবে।”
“ইয়োর ফ্রেন্ডস অ্যান্ড নেইবার্স” শীঘ্রই অ্যাপল টিভিতে মুক্তি পাবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন