ইতালির আসন্ন একজন তরুণ সন্তের স্বীকৃতিকে কেন্দ্র করে অনলাইনে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি, ক্যাথলিক চার্চ তাদের প্রথম “মিলেনিয়াল সেইন্ট” কার্লো অ্যাকুটিসের কিছু কথিত পবিত্র স্মৃতিচিহ্ন (relics) অনলাইনে বিক্রির ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। খবরটি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে, কারণ চার্চের নিয়ম অনুযায়ী, এইসব পবিত্র জিনিস বিক্রি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
পবিত্র স্মৃতিচিহ্ন (relics) কী? ক্যাথলিক ধর্মানুসারে, কোনো সাধু ব্যক্তির শরীরের অংশ, পোশাক বা ব্যবহৃত কোনো জিনিসকে পবিত্র মনে করা হয়। এইগুলি ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের দ্বারা প্রমাণীকরণের পর চার্চে সংরক্ষণ করা হয় এবং ভক্তদের শ্রদ্ধার জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এই ধরনের পবিত্র জিনিসের বিক্রিকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে গর্হিত কাজ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
অনলাইন নিলাম ও চার্চের প্রতিক্রিয়া জানা গেছে, অজ্ঞাতপরিচয় কিছু ব্যক্তি অনলাইনে অ্যাকুটিসের চুলের কিছু অংশ নিলামে তুলেছিলেন, যেগুলির দাম ২,০০০ ইউরোর বেশি উঠেছিল। এই ঘটনার কথা জানতে পেরে, আসিসির বিশপ ডোমেনিকো সোরেন্টিনো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এই জিনিসগুলি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যদি এই ধরনের কাজ প্রতারণামূলক হয়, তবে তা ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি চরম অবমাননা হিসেবে গণ্য হবে।
কে এই কার্লো অ্যাকুটিস? কার্লো অ্যাকুটিস ছিলেন একজন কিশোর, যিনি ২০০৬ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে লিউকোমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তিনি ছিলেন প্রযুক্তি-বান্ধব এবং ধর্মীয় বিষয়ে গভীর অনুরাগী। তিনি ইউক্যারিস্টের প্রতি গভীর ভক্তি দেখিয়েছেন এবং এর উপর ভিত্তি করে একটি অনলাইন প্রদর্শনী তৈরি করেছিলেন। আগামী ২৭ এপ্রিল ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকায় তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে সন্ত ঘোষণা করা হবে। ইতিমধ্যেই প্রায় ১০ লক্ষ তীর্থযাত্রী ইতালির আসিসিতে এসে ভিড় করেছেন, যেখানে অ্যাকুটিসের দেহ সংরক্ষিত আছে।
স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণের প্রক্রিয়া বিশপ সোরেন্টিনো জানিয়েছেন, পবিত্র স্মৃতিচিহ্নগুলি হলো শরীরের ক্ষুদ্র অংশ, যা ঈশ্বরের নৈকট্য বোঝায়। অ্যাকুটিসের হৃদপিণ্ডের আবরণ (pericardium) তিনি ২০২১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাথলিক বিশপ সম্মেলনে প্রদান করেছিলেন। চার্চ এই ধরনের পবিত্র জিনিস বিনামূল্যে ভক্তদের মধ্যে বিতরণ করে, যা তাদের ভক্তি প্রদর্শনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
বিতর্কের কারণ কার্লো অ্যাকুটিসের ক্যানোনাইজেশন প্রক্রিয়াটি কিছু মানুষের মধ্যে সন্দেহ তৈরি করেছে। অনেকেই মনে করেন, এটি চার্চের পক্ষ থেকে তরুণদের আকৃষ্ট করার একটি কৌশল। তবে, যারা আসিসিতে তীর্থযাত্রায় এসেছেন, তারা অ্যাকুটিসের ভক্তি ও আদর্শকে সম্মান জানান এবং তাকে তাদের প্রজন্মের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখেন।
ধর্মীয় পণ্ডিতদের মতামত এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ বলেন, “ধর্মীয় পবিত্র বস্তু বা ব্যক্তির স্মৃতিচিহ্ন বিক্রি করা সব ধর্মেই অনুচিত। এটি ধর্মীয় মূল্যবোধের পরিপন্থী এবং ভক্তদের অনুভূতিতে আঘাত করে।”
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস