মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ তীব্র হওয়ায় বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে বন্ড মার্কেটে, যেখানে মার্কিন সরকারি বন্ডের ব্যাপক হারে দরপতন দেখা যাচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর কিছু প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মার্কিন বন্ড, যা সাধারণত বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হয়, তার চাহিদা কমে যাওয়ায় এই দরপতন শুরু হয়েছে। এর কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে, চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বিনিয়োগকারীরা মার্কিন অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।
এর ফলস্বরূপ, মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের ফলন বা সুদের হার দ্রুত বাড়ছে। উদাহরণস্বরূপ, বুধবার, ১০ বছর মেয়াদী মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের ফলন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪.৪২ শতাংশে, যা ফেব্রুয়ারির শেষ ভাগের পর সর্বোচ্চ।
বন্ডের ফলন এবং দামের মধ্যে বিপরীত সম্পর্ক বিদ্যমান। অর্থাৎ, ফলন বাড়লে দাম কমে যায়। তাই, ফলন বৃদ্ধি মানেই হল বন্ডের দাম কমে যাওয়া, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগের একটি বড় কারণ।
৩০ বছর মেয়াদী বন্ডের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক। এর ফলন ৫ শতাংশের উপরে উঠেছিল, যা ২০২৩ সালের শেষের দিক থেকে সর্বোচ্চ। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, এমন পরিস্থিতিতে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভকে হস্তক্ষেপ করতে হতে পারে।
যুক্তরাজ্যের বন্ড মার্কেটও এই অস্থিরতা থেকে রেহাই পায়নি। মার্কিন বাজারের এই প্রতিক্রিয়ার কারণে, যুক্তরাজ্যের ৩০ বছর মেয়াদী বন্ডের ফলন বুধবার সকালে ৫.৫১৮ শতাংশে পৌঁছে যায়, যা প্রায় ২৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
এই পরিস্থিতিতে, আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন দেশের শেয়ার সূচকেও বড় ধরনের পতন দেখা গেছে। জাপানের নিক্কেই সূচক প্রায় ৪ শতাংশ কমেছে।
তাইওয়ানের শেয়ার বাজারেও ৫.৮ শতাংশ পতন হয়েছে। হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক সামান্য কমলেও, দক্ষিণ কোরিয়ার কোস্পি ২০০ সূচক ১.৮ শতাংশ কমেছে।
তবে, চীনের শেয়ার বাজার কিছুটা স্থিতিশীল ছিল, সরকারি হস্তক্ষেপের কারণে সাংহাই কম্পোজিট সূচক ১.১ শতাংশ এবং শেনজেন কম্পোজিট সূচক ২.২ শতাংশ বেড়েছে। ইউরোপের প্রধান বাজারগুলোতেও বুধবার সকালে দরপতন হয়।
লন্ডনের এফটিএসই১০০ সূচক ২.২ শতাংশ এবং জার্মানির ড্যাক্স সূচক প্রায় ২.৩ শতাংশ কমেছে।
বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতির এই টালমাটাল পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিশ্ব অর্থনীতির এই অস্থিরতা আমাদের দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য, বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বাড়লে, তা বাংলাদেশের বাজারেও মূল্যস্ফীতি ঘটাতে পারে।
চীনের পক্ষ থেকে মার্কিন শুল্কের জবাব দেওয়ার ঘোষণা আসায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। চীন বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি ভুল পথে চলতে থাকে, তবে তারা শেষ পর্যন্ত লড়াই করবে।
এই পরিস্থিতিতে, বিশ্ব অর্থনীতি আরও একটি অনিশ্চয়তার দিকে যাচ্ছে, যা বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান