গ্রিসে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি: মজুরি বাড়ানোর দাবিতে দেশজুড়ে ধর্মঘট
ইউরোপের দেশ গ্রিসে জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের সাথে সঙ্গতি রেখে বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবিতে দেশজুড়ে ধর্মঘট পালন করছেন শ্রমিকরা। এই ধর্মঘটের কারণে দেশটির সরকারি পরিষেবাগুলোতে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বুধবার (গতকাল) এই ধর্মঘটের ফলে ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল, অনেক ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে এবং গণপরিবহন ব্যবস্থা আংশিকভাবে চলেছে।
শ্রমিক ইউনিয়নগুলো মূলত দুই প্রধান দাবিতে এই ধর্মঘট ডেকেছে। প্রথমত, তারা সম্মিলিত দর কষাকষির অধিকার পুনরুদ্ধার করতে চায়। গ্রিসের অর্থনৈতিক সংকটকালে এই অধিকার বাতিল করা হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, তারা শ্রমিকদের জন্য উপযুক্ত বেতন নিশ্চিত করতে চাইছে, যা বর্তমান মূল্যস্ফীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।
২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত গ্রিস মারাত্মক ঋণ সংকটের মধ্যে ছিল। এই সময়ে শ্রমিক ও পেনশনভোগীদের বেতন ও ভাতার পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো হয়েছিল। আন্তর্জাতিক সহায়তা প্যাকেজের শর্ত হিসেবে এটি করা হয়েছিল। যদিও গ্রিস এখন সেই সংকট থেকে বেরিয়ে এসেছে এবং দেশটির অর্থনীতিতে প্রায় ২.৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে, কিন্তু অনেক পরিবার এখনও তাদের দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে।
সংবাদ সংস্থা এএল জাজিরার সাথে আলাপকালে জিএসইর (GSEE) একজন প্রতিনিধি জানান, “আমাদের কনফেডারেশনের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের জন্য উপযুক্ত মজুরি নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছে। ২০১২ সালের আগে গ্রিসের প্রায় অর্ধেক শ্রমিকের সম্মিলিত মজুরি চুক্তি ছিল। এমনকি নিয়োগকর্তা এবং শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে একটি জাতীয় চুক্তিও ছিল, যার মাধ্যমে ৯০ শতাংশের বেশি শ্রমিক মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ বিভিন্ন সুবিধা পেতেন। কিন্তু বর্তমানে সরকার ব্যক্তিগত চুক্তির ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে, যেখানে শ্রমিকদের দর কষাকষির কোনো সুযোগ নেই।
জিএসইই আরও জানায়, “২০১৯ সালের তুলনায় বর্তমানে আমরা ১০ শতাংশ কম পণ্য কিনছি। কারণ জিনিসপত্রের দাম অনেক বেড়েছে। আমরা আমাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য ধর্মঘট করছি।
ধর্মঘটকারীরা এথেন্সের কেন্দ্রস্থলে বিক্ষোভ করেছেন। সেখানে বাস, ট্রলি, ট্রেন এবং মেট্রো পরিষেবা দিনের কিছু সময়ের জন্য চললেও, তা ছিল সীমিত। অন্যান্য শহর ও নগরেও একই ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে।
এদিকে, বুধবার মধ্যরাত থেকে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত পর্যন্ত গ্রিস থেকে অভ্যন্তরীণ রুটের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক রুটে বাণিজ্যিক ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিসংখ্যান সংস্থা ইউরোস্ট্যাটের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ক্রয় ক্ষমতার দিক থেকে গ্রিসের সর্বনিম্ন বেতন পর্তুগাল ও লিথুয়ানিয়ার চেয়েও কম ছিল।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, আর্থিক সংকট শুরুর আগে ২০১০ সালে গ্রিসের গড় বেতন ছিল ১,৩৪২ ইউরো (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় ১,৫২,০০০ টাকা)। বর্তমানে তা ১০ শতাংশ কমেছে।
সরকার যদিও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে, তবুও তারা ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে চাইছে। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা সর্বনিম্ন মজুরি ৯৫০ ইউরো (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় ১,০৮,০০০ টাকা) পর্যন্ত বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। একইসঙ্গে গড় মাসিক বেতন ১,৫০০ ইউরো (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় ১,৭০,০০০ টাকা) করারও লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
নৌ শ্রমিক ইউনিয়নের অ্যাঞ্জেলোস গালাপোলোস রয়টার্সকে বলেছেন, “মূল্যবৃদ্ধি এবং জ্বালানি ও ওষুধের দাম বাড়ার কারণে এই ব্যবধান বেড়েই চলেছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা