শিরোনাম: এডিএইচডি (ADHD)-এর ওষুধ: স্বাস্থ্য ঝুঁকিগুলির চেয়ে উপকার বেশি, গবেষণায় উঠে এল
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, মনোযোগ ঘাটতি এবং অতি সক্রিয়তা ব্যাধি (Attention Deficit Hyperactivity Disorder – ADHD) – এর চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের উপকারিতা, রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দনের সামান্য বৃদ্ধি সহ কিছু স্বাস্থ্য ঝুঁকির চেয়ে অনেক বেশি। যুক্তরাজ্যের একদল গবেষকের নেতৃত্বে হওয়া এই গবেষণাটি এডিএইচডি-এর চিকিৎসারত রোগীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা নিয়ে এসেছে।
গবেষণাটি পরিচালনা করেন সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্যামুয়েল কোর্টেজ। গবেষণায় দেখা গেছে, এডিএইচডি-এর ওষুধ সেবনকারী শিশুদের বেশিরভাগের ক্ষেত্রেই রক্তচাপ এবং হৃদস্পন্দনের সামান্য বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। তবে গবেষকরা বলছেন, ওষুধের সামগ্রিক প্রভাব খুবই সামান্য। তাই, ওষুধ সেবনের সময় রোগীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সতর্ক থাকা জরুরি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেকোনো ওষুধের ঝুঁকি এবং উপকারিতা উভয় দিক বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এডিএইচডি-এর ওষুধের ক্ষেত্রে, ঝুঁকির তুলনায় উপকার অনেক বেশি। এই ওষুধগুলো ব্যবহারের ফলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় উন্নতি হয়, সেইসঙ্গে উদ্বেগমুক্ত জীবন যাপন করা সহজ হয়। তবে, ওষুধ ব্যবহারের কারণে কারো কারো উচ্চ রক্তচাপের সামান্য ঝুঁকি থাকতে পারে।
যুক্তরাজ্যে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে প্রায় ৩-৪% এবং শিশুদের মধ্যে প্রায় ৫% এডিএইচডি-তে আক্রান্ত। এই নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তিরা অস্থিরতা, মনোযোগের অভাব এবং অপরিণামদর্শিতার মতো সমস্যায় ভোগেন। চিকিৎসকরা সাধারণত এই রোগের চিকিৎসায় বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ব্যবহার করেন, যার মধ্যে রয়েছে মিথাইলফেনিডেট (যেমন, রিট্যালিন), লিসডেক্সামফেটামিন এবং ডেক্সামফেটামিন। এছাড়াও, অ্যাটোমোক্সিটিন এবং গুয়ানফ্যাসিন-এর মতো নন-স্টিমুলেন্ট ওষুধও ব্যবহার করা হয়।
গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, এডিএইচডি-এর চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত ওষুধগুলি হৃদরোগের কারণ হতে পারে কিনা, সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে, সব ধরনের এডিএইচডি ওষুধই রক্তচাপ এবং হৃদস্পন্দন সামান্য বাড়িয়ে দিতে পারে। গুয়ানফ্যাসিন বাদে, যা রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দন কমাতে সাহায্য করে।
গবেষকরা পরামর্শ দিয়েছেন, যাদের আগে থেকেই হৃদরোগ রয়েছে, তাদের এডিএইচডি-এর ওষুধ শুরু করার আগে একজন বিশেষজ্ঞ হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলা উচিত।
বাংলাদেশেও অনেকের মধ্যে এডিএইচডি-এর সমস্যা দেখা যায়। তবে, এখানে এই বিষয়ে সচেতনতা তুলনামূলকভাবে কম। অনেক সময় রোগীরা রোগ সম্পর্কে জানেন না, ফলে চিকিৎসা থেকে তারা বঞ্চিত হন। মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যাগুলো নিয়ে সমাজে প্রচলিত ভুল ধারণা এবং কুসংস্কারের কারণে অনেকে ডাক্তারের পরামর্শ নিতেও দ্বিধা বোধ করেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এডিএইচডি একটি চিকিৎসাযোগ্য রোগ। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার মাধ্যমে শিশুদের পড়াশোনা ও সামাজিক জীবনে উন্নতি আনা সম্ভব। অভিভাবকদের উচিত, শিশুদের মধ্যে এ ধরনের কোনো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া।
এডিএইচডি-এর ওষুধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো খুবই জরুরি। চিকিৎসার পাশাপাশি, রোগীর সঠিক পরিচর্যা এবং কাউন্সেলিংও প্রয়োজন।
তথ্য সূত্র: The Guardian