যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতি নিয়ে বিতর্ক: ভুল করে ফেরত পাঠানো, ভিসা বাতিল এবং আইনি লড়াই
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে অভিবাসন বিষয়ক কিছু নীতি নিয়ে আবারও বিতর্ক দানা বেঁধেছে। সম্প্রতি একজন ব্যক্তিকে ভুল করে এল সালভাদরে ফেরত পাঠানোর ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল এবং দক্ষিণ সুদানের নাগরিকদের ভিসা স্থগিত করার মতো ঘটনাগুলো নতুন করে আলোচনা জন্ম দিয়েছে।
আর্মিংড্রো আব্রেগো গার্সিয়া নামের এক ব্যক্তি, যিনি পেশায় একজন মেটাল শ্রমিক, তাকে ভুল করে এল সালভাদরের একটি কারাগারে ফেরত পাঠানো হয়। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের সরকার এই ভুলের কথা স্বীকার করেছে, তবে তাকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া এখনো সম্পন্ন হয়নি। আদালতের নির্দেশে আগামী সোমবারের মধ্যে তাকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনার কথা রয়েছে। জানা গেছে, আব্রেগো এক দশকেরও বেশি সময় আগে এল সালভাদরের গ্যাং সহিংসতা থেকে বাঁচতে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে এসেছিলেন।
আদালতে বিচারক পাওলা জিনিস এই ঘটনার তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, আব্রেগোকে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত ছিল ‘সম্পূর্ণ বেআইনি’ এবং ‘মারাত্মক ভুল’। এদিকে, মার্কিন বিচার বিভাগ এই রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে আপিল করেছে। আব্রেগোর আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তার মক্কেলকে কোনো গ্যাংয়ের সঙ্গে যুক্ত করার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
আরেকটি ঘটনায়, রুমিশা ওজতুর্ক নামের তুরস্কের এক পিএইচডি শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে তার রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, তাকে আটকের পর রাজ্যের বাইরে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়, যাতে তিনি তার আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারেন।
অন্যদিকে, দেশটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিলের ঘটনা ঘটেছে। এখন পর্যন্ত দুই ডজনের বেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে। এর কারণ জানতে চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সরকারের কাছে জবাবদিহিতা চেয়েছে। জানা গেছে, ইউনিভার্সিটি অফ ম্যাসাচুসেটস অ্যামহার্স্ট, ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস অস্টিন, ইউনিভার্সিটি অফ সিনসিনাটি, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতির কড়া সমালোচনা করে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রিকার্ডো হাউসম্যান বলেন, এই ধরনের পদক্ষেপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের সকল নাগরিক, সরকারের কাছে জিম্মি হয়ে পড়তে পারে।
এছাড়াও, দক্ষিণ সুদানের নাগরিকদের ভিসা স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এর ফলে ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্কেটবল খেলোয়াড় খামান মালুচ এর ভিসা এবং যুক্তরাষ্ট্রে আসার ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
এসব ঘটনা ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতির কঠোরতাকেই তুলে ধরে, যা বর্তমানে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন